

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এমন নির্দেশ দেন। ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন করা হবে—এমন ঘোষণা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আজকে (গতকাল) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড আছে, আমরা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যে, সেই কমিশন যদি সরকারের কোনো একটি বিষয়ে তদন্ত করতে চাইত, সরকারের কোনো পারমিশনেরই প্রয়োজন ছিল না; তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। খালেদা জিয়া কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, কতটা দৃঢ় শপথ ছিল তার দুর্নীতিকে দমন করার জন্য যে, উনি ওই কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ, এটি আমরা আবার করব। গত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার এ নিয়মটি পাল্টে দিয়েছিল যে, সরকারের কোনো দুর্নীতি তদন্ত করতে হলে সরকারের পারমিশন লাগবে। আমরা দরকার হলে দেশের স্বার্থে এটিকে আবার চেঞ্জ করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্ব বলেন, বিএনপির কাছে নিরাপদ; দেশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা বলেন, এটিও বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করার রেকর্ডে বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে।’
নির্বাচন সামনে রেখে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমাদের আর ঘরে বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই। মাঠে চলে যেতে হবে, মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, পথে-প্রান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘পারবে কি না। তোমাদের পারতে হবে। এর বাইরে আর এখন সময় নেই।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করেছি। এখন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য এখন মাঠে নেমে পড়তে হবে। আসুন, এটাই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই হোক আজকে আমাদের এই দেশগড়া পরিকল্পনার শপথ।’
‘কথার ফুলঝুরিতে মানুষের পেটে খাবার আসবে না’ মন্তব্য করে অতীতে বিএনপি সরকারে থাকাকালে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও তার সফল বাস্তবায়নের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণের পেটে খাবার আসে না, কথার ফুলঝুরি দিয়ে কর্মসংস্থান হয় না, কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণের অর্থের সংস্থান হয় না। কর্মসংস্থান করতে হলে পরিকল্পনা লাগে, জনগণের পেটে আহার দিতে হলে, ভাত দিতে হলে পরিকল্পনা লাগে, যা একমাত্র আপনার আছে, যা একমাত্র এই দলের আছে, যা একমাত্র বিএনপির আছে, আর কারও নেই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রত্যেক নেতাকর্মী একটি জিনিস মনে রাখবেন—দেশের স্বাধীনতা বলেন, সার্বভৌমত্ব বলেন, গণতন্ত্র বলেন—সবকিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে। আমরা যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এ দেশকে আমরা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারব। দেশের অর্থনীতি, নারী স্বাধীনতা থেকে শুরু করে, তরুণদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সব কিছু ধীরে ধীরে আমরা নিশ্চিত করতে পারব। যদি আমরা দেশকে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, জনগণকে সঙ্গে রাখতে না পারি, এ দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন দেখা দেবে।’
বিএনপি প্রণীত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ সারা দেশে ঘরে ঘরে মা-বোনদের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের কাছে, মুরুব্বিদের কাছে, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কাছে অবশ্যই পৌঁছাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ দেখতে চায় বিএনপি করছে কি না, করবে কি না। যদি আমরা (পরিকল্পনার) ৪০ শতাংশও করতে পারি, জনগণ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।’
তালপট্টি দ্বীপের প্রসঙ্গ তুলে তারেক রহমান বলেন, ‘তালপট্টির কথা আপনাদের মনে আছে? শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তালপট্টির ওপরে কীভাবে বিএনপি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এটি ছিল আমাদের দেশের অংশ। একইভাবে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, কীভাবে আমাদের পানির হিস্যা আমরা বের করে নিয়ে এসেছিলাম। তার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যন্ত যেতে কোনো ধরনের দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম না। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গিয়ে বলেছি, আমাদের পানির হিস্যা দিতে হবে। সেটি আমরা আল্লাহর রহমতে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আইনশৃঙ্খলা কঠোর, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু, প্রান্তিক মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড পর্যায়ক্রমে প্রদান, কৃষকদের জন্য ফার্ম কার্ড, সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান।
মন্তব্য করুন