ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুরের ভাঙ্গা অংশে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বিভাজকের রেলিংয়ে ধাক্কা ও পরে আগুন ধরে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী, তিনজন পুরুষ ও দুই শিশু। তাদের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের এবং গাড়িচালক বাদে বাকি দুজন তাদের স্বজন। মাইক্রোবাসটি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে যাচ্ছিল।
নিহতরা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মোছাম্মৎ বিউটি বেগম, তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত ও হাসিব হোসেন, মেয়ে রাফসানা খাতুন, শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, ছোট বোন নাসরিন বেগম, বড় বোনের ছেলে আরিফ হোসেন ও গাড়িচালক মৃণাল মালো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গার মালিগ্রামে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এ সময় দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। পরক্ষণেই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ শুরু করেন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পরে ফায়ার সার্ভিস দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরও দুজন এবং ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান গাড়িচালক।
এদিকে ঘটনার পর পরই ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাড়িচালক মৃণাল মালো পুলিশকে জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে ভাড়া নিয়ে গত শুক্রবার ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। শনিবার ফেরার সময় ঢাকার কদমতলী থেকে ওই যাত্রীদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলেন। এরপর রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে যাত্রীদের নিয়ে ফরিদপুরে ফিরছিলেন। পথে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে আঁকাবাঁকাভাবে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল আসতে দেখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর অ্যাম্বুলেন্সেটির এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজ করেছে, গাড়িটির সিলিন্ডার ফেটে আগুন ধরে যায়। সেখান থেকে আহত গাড়িচালক মৃণাল মালোকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে মারা যান তিনি। একই কথা বলেছেন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহবুব আলম।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন চৌধুরী। তিনি ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়া ফরিদপুর-১ আসনের এমপি মঞ্জুর হোসেন বুলবুলও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি : এদিকে এক্সপ্রেসওয়েতে কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। এ সময় তিনি নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান।
মন্তব্য করুন