শেখ হারুন
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রেলের ‘সম্রাট’ ইরফানুল প্রকল্পের টাকায় স্বেচ্ছাচারী

অনিয়ম-দুর্নীতি
রেলের ‘সম্রাট’ ইরফানুল প্রকল্পের টাকায় স্বেচ্ছাচারী

বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্লিনার পদে চাকরি পেয়েছিলেন জামালপুরের সাকিবুল ইসলাম। তার কর্মক্ষেত্র জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে; কিন্তু যোগদানের পর থেকেই প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেলের সংগ্রহ শাখার উপপরিচালক ইরফানুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছেন সাকিব।

শুধু রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারীকে বাসার কাজে নিয়োজিত করেই ক্ষান্ত হননি ওই কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছেন প্রকল্পের টাকায় কেনা দুটি গাড়ি। চালকসহ এসব গাড়ির খরচ বাবদ প্রতি মাসে সরকারকে লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকেও অনৈতিক সুবিধা নেন তিনি। দুই সপ্তাহ ধরে কালবেলার অনুসন্ধানে ইরফানুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (সদর) ইরফানুল ইসলামকে ২০২২ সালে রেলের সংগ্রহ শাখার উপপরিচালক পদে বদলি করা হয়। তবে তদবিরের মাধ্যমে প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। সেই থেকে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ইরফানুলের পরিচয় ‘স্বেচ্ছাচারী সম্রাট’ হিসেবে। তারা বলছেন, রেলে সব কিছুই হয় তার ইচ্ছামতো। সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারীরা যেন তার কেনা গোলাম আর সরকারি টাকায় কেনা গাড়ি তার নিজের সম্পত্তি! ইরফানুলের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের পেছনে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আশীর্বাদ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী প্রকল্পে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই ইরফানুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে হচ্ছে সাকিবুল ইসলামকে। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানেই দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। এই সময়ে ওই কর্মকর্তার সন্তানদের সেবাযত্ন, রান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বাসার সব কাজ করতে হয়। যদিও মাস শেষে প্রকল্প থেকেই ১৭ হাজার ৬০০ টাকা বেতন দেওয়া হয় তাকে। মাসে দু-এক দিন প্রকল্প অফিসে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আসেন।

এ বিষয়ে সাকিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলামের বাসায় দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

শুধু সাকিব নন, ছুটির দিনে এ প্রকল্পের অন্য কর্মচারীদেরও ওই কর্মকর্তার বাসার কাজ করতে হয়। কথা না শুনলে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। এ কারণে একজন কর্মচারী প্রকল্পের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাকিবের আগে ইরফানুলের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই প্রকল্পের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া সৌখিন নামে এক কর্মচারী। পরিবারটির দুর্ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে প্রকল্পের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে সৌখিন দৈনিক কালবেলাকে জানান, ‘২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছিলাম। অফিস সহায়ক পদে চাকরি হলেও ইরফান স্যারের ছেলের দেখাশোনা এবং বাসার বিভিন্ন কাজ করতে হতো। মাঝে মাঝে অফিসে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতাম। কিন্তু স্যারেরা অনেক দুর্ব্যবহার করতেন, এ কারণে ৭-৮ মাস পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের টাকায় কেনা তিনটি গাড়ির মধ্যে দুটিই এখন ইরফানুলের দখলে। গাড়ির দুটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৬৯৭৮ এবং ১৩-৬৯৭৯। বেশিরভাগ সময় গাড়িগুলো ব্যবহার হয় তার পারিবারিক কাজে। কর্মকর্তার বাসার বাজার করা, ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাওয়া-আসার জন্য ব্যবহার করা হয় গাড়িগুলো। গাড়ি দুটির চালকরাও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার পারিবারিক কাজে নিয়োজিত থাকেন। এমনকি ছুটির দিনেও একইভাবে কাজ করতে হয় তাদের।

প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে আপাতত কোনো কাজ না থাকলেও দুটি গাড়ির জ্বালানি খরচ ও চালকদের বেতন সরকারকেই দিতে হচ্ছে। অনুসন্ধানে পাওয়া নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পারিবারিক কাজে ব্যবহার করলেও শুধু গাড়ি ব্যবহারেই প্রতি মাসে সরকারের অপচয় হচ্ছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দুই চালকের বেতন হিসেবে আরও ৩৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।

জানা গেছে, শুধু জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী প্রকল্পের দুই গাড়ি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেননি ইরফানুল। রেলওয়ে কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটিজ (আরসিআইপিএফ) প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও একটি নিশান গাড়ি উপহার নিয়েছেন তিনি— যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২০৮৬। গাড়িটির ব্যয় বহন করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই। এ প্রকল্পেও অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন রেলের এই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্যম সারির কর্মকর্তা হলেও ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন ইরফানুল ইসলাম, যার বেশিরভাগই সরকারি টাকায়। যেসব কাজে তার সম্পৃক্ততা নেই, সেগুলোর জন্যও ইরফানুল বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে যান। সম্প্রতি ঠিকাদারের টাকায় ১০ দিন জাপান এবং ভিয়েতনাম ঘুরে এসেছেন রেলের এ কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসানের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে এত অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা।

রেলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘ইরফান স্যার মহাপরিচালকের (ডিজি) পাওয়ারে চলেন। ডিজির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকায় তিনি যা ইচ্ছে তাই করেন। প্রকল্পে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করতে পারেন না। আর এ সুযোগে প্রকল্পের কর্মচারীদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে যাচ্ছেন তিনি।’

এ ছাড়াও ইরফানুল এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে গৃহকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ। জানা গেছে, ইরফানুল ইসলামের স্ত্রী নাহিদা সুলতানাও একজন সরকারি কর্মকর্তা। দুর্ব্যবহার এবং শারীরিক নির্যাতনের কারণে তাদের বাসায় কোনো গৃহকর্মী থাকতে চান না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের রেলওয়ে কলোনির বাসায় মনি নায়েক এবং রুসাপা আক্তার রিতু নামে দুজন কাজ করত। তাদের মাঝে মধ্যেই শারীরিকভাবে নির্যাতন করত কর্মকর্তা দম্পতি। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে পালিয়ে চলে গেছে ওই দুই গৃহকর্মী।

এসব বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের কর্মচারীদের পারিবারিক কাজে লাগানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন ইরফানুল ইসলাম। প্রকল্পের একটি গাড়ি তিনি নিজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। তবে ঠিকাদারের কাছ থেকে গাড়ি নেওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে তার দাবি। প্রতিবেদকের কাছে এসব অভিযোগের প্রমাণ আছে—জানানো হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর বার বার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘রেলওয়েতে কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে কে কী করছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে না জেনে বলা সম্ভব নয়।’

প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মচারীকে দিয়ে কর্মকর্তা তার বাসায় কাজ করাতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তিনি এই কাজ করতে পারেন না। প্রকল্পের লোক দিয়ে বাসায় কাজ করানোর সুযোগ নেই।’

ইরফানুলের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন রেলের ডিজি।

ইরফানুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সম্পর্কে মন্তব্য চাওয়া হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘এটি পুরোপুরি ক্ষমতার অপব্যবহার—যার অপর নাম দুর্নীতি। প্রকল্পের গাড়ি এবং কর্মচারী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের এখতিয়ার না থাকলেও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করছেন।’

ড. ইফতেখার বলেন, ‘তিনি যে পর্যায়ের কর্মকর্তা, তার তো এ ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। সুতরাং অনিয়মগুলো করে তিনি যে এককভাবে লাভবান হচ্ছেন, সেটা নয়, তার পেছনে ঊর্ধ্বতন কেউ তাকে অনিয়ম করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। সে কারণে তিনি অধস্তনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করছেন। এ জন্য তার পাশাপাশি যারা তাকে এ অপরাধের সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘এই স্তরের কর্মকর্তার গৃহকর্মী পাওয়া এবং গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রজেক্টের কর্মচারীকে বাসায় কাজ করানো বেআইনি। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী এটা অপরাধ। এটার কারণে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।’

জানা গেছে, অনিয়ম ছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। গত ৫ বছরে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো কাজ হয়নি। ১৪ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত এই প্রকল্পের এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৯৫ কোটি ১৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণে খরচ ৩৯১ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। বাকি প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে গাড়ি কেনা, তেল খরচ এবং অফিস পরিচালনা বাবদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিলেটে সাদাপাথর লুট / গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বিমত

আমাদের আদর্শগত শত্রু বিজেপি, বললেন থালাপতি বিজয়

৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় প্রধান শিক্ষককে বিদায়

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম হবে গণহত্যাকারী : আসিফ মাহমুদ

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান

নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে

জাকসু নির্বাচন, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নিয়ে আসছে ছাত্রশিবির

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

১০

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

১১

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

১২

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

১৩

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

১৪

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

১৫

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

১৬

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৭

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

১৮

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১৯

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

২০
X