দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘কিংস পার্টি’র খ্যাতি পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সঙ্গে নিজের এবং ক্রিকেটার সাবিক আল হাসানের সম্পৃক্ততার খবর ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, তাকে দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তিনি গ্রহণ করেননি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে উল্টো প্রশ্ন করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘কী করেছি আমি? বিএনএমে যোগ দিয়েছি? দল ভেঙেছি? এটা তো পরিষ্কার যে, আমাকে নতুন দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি সেটা গ্রহণ করিনি।
এখন অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা তো গোপন কোনো কিছু না। আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছেন তারা (বিএনএম ও সরকারের কিছু লোক), আমি প্রস্তাব গ্রহণ করি নাই, বিএনপিতে রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাই সাকিবকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। সাকিব রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি দেশের গৌরব, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কোনোদিন রাজনীতি করেন নাই, তিনি রাজনীতি করতেই পারেন। কিন্তু আমি তাকে কোনো উৎসাহ দিইনি। আমি যোগদান না করায় তিনিও তার পথ বেছে নিয়েছেন। সম্পূর্ণ পাতানো এই নির্বাচনে তিনি এমপি হয়েছেন, এটি তার বিষয়। এ নিয়ে যে কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, এটা সঠিক নয়।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এত দিন পরে সাকিব ও আমার সম্পর্কে যে মিথ্যা প্রচার করেছে, এতে আমি মর্মাহত হয়েছি। দেশে কত অপকর্ম করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। একতরফা ডামি নির্বাচন করল, দেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাট চলছে, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না—এ নিয়ে তো কোনো রিপোর্ট ওইসব পত্রিকায় কিছু দেখি না। আমার মনে হয়, সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম লুকিয়ে রেখে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতেই আমার বিরুদ্ধে এই বিএনএম সৃষ্টির কাল্পনিক কাহিনি তৈরি করেছে। সব মিথ্যাচার।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। রাজনীতি অত্যন্ত নোংরা। নির্বাচনের সময় নানা কলাকৌশল হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকে, তারা চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছু লোক বাগিয়ে এনে নিজেদের দলে বা অন্য কোনো দলে সন্নিবেশ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা নতুন দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের বলেছি, রাজনীতিতে কোনো শর্টকাট নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগাযোগ করা শুরু করেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন যে, বিএনপি ত্যাগ করার জন্য আমি উন্মুখ। কিন্তু ‘আমি তাদের বলেছিলাম, আমার পক্ষে ৩২ বছর পর দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। শিগগির রাজনীতি থেকে অবসর নেব।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপিতে কাউন্সিল হয় না, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে নিয়ে কখনো কোনো অসৌজন্যমূলক কথা বলিনি।’ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় নির্বাচন হলে বিএনপির জন্য ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকা, রাজনীতি, মন্ত্রিত্ব, কারাদণ্ড ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন দুইবারের মন্ত্রী ও ছয়বারের সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘তার মতো ৮০ বছর বয়স্ক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কারাগারে পাঠানো হলো মার্চ মাসে। সেটা মিথ্যা মামলায়। এটা তাকে ব্যথিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি জনতা ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছি। মামলাটি পুলিশের। সাক্ষীও পুলিশ।’ ৩২ বছর আগে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় অনেক লুটেরাকে প্রতিরোধ করার কথাও বলেন এই বিএনপি নেতা।