বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০২:৩১ এএম
আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ০৭:১৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

শর্ত মেনে নেওয়ায় বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুত ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কার পর্যালোচনা করে ঋণ ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন সংস্থাটির ঢাকা সফররত কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে আইএমএফ কার্যালয়ে ইতিবাচক সুপারিশ পাঠিয়েছেন তারা। সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন পেলে শিগগির বাংলাদেশকে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়া হবে।

১৫ দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ কর্মকর্তা পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বিনিময় হারের পুনর্বিন্যাস, ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং খুচরা সুদের হারের সম্পূর্ণ উদারীকরণ পদক্ষেপ রয়েছে। দেশীয় প্রেক্ষাপটে এগুলো বেশ সমালোচনামূলক হলেও দীর্ঘমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে এই উদ্যোগগুলো সঠিক। তবে দ্রুত কার্যকর সুফল পেতে হলে এসব সংস্কার কর্মসূচির আরও গতি বৃদ্ধি এবং চলমান প্রচেষ্টা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আইএমএফ আগের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ক্রিস পাপাজর্জিও দাবি করেন, বাংলাদেশ আইএমএফ সমর্থিত কর্মসূচির আওতায় কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে জ্বালানি মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তা সত্ত্বেও, বৈশ্বিক সংকট, আর্থিক অবস্থার কঠোরতা এবং এখনো উচ্চতর আন্তর্জাতিক পণ্য এবং খাদ্যের দামবৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নানা দুর্বলতা যোগ হয়েছে। এসবের প্রভাবে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত উচ্চহারে এবং নিম্নহারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েছে। তবে আইএমএফ আশা করছে, সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে এটা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ শতাংশ এবং তার পরের অর্থবছর ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে; কিন্তু চলমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায় তার জন্য সরকারকে ভিন্ন উপায়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাজেটারি ব্যবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যকর পদক্ষেপ জোরদারে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ স্টাফ মিশন।

আইএমএফ মিশন প্রধান আরও জানান, একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও খাদ্যমূল্যের বর্ধিত দাম এবং বাংলাদেশের চাহিদাযোগ্য বেশিরভাগ পণ্য আমদানিনির্ভর হওয়ায় বেশি করে ডলার খরচ করতে হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ পড়ছে। আইএমএফের পর্যবেক্ষণ বলছে, রিজার্ভে এই ঘাটতি পরিস্থিতি আগামী অর্থবছরও অব্যাহত থাকবে। সেক্ষেত্রে কীভাবে রিজার্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারে, সেই পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় পর্যালোচনায় সেই লক্ষ্যে আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী নিট রিজার্ভের শর্তেও বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছুটা রিলাক্স দেওয়া হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে মিশন প্রধান ক্রিস জোর দিয়ে বলেন, আইএমএফের পলিসি অ্যাকশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বাস্তবতায় চলমান আমদানি সংকোচন এবং নীতি কঠোরকরণের কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশ হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। একইভাবে যা ২০২৪-২৫ অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৬ শতাংশ হতে পারে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আইএমএফ মনে বাংলাদেশের সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর জন্য নিম্ন কর থেকে জিডিপি অনুপাত উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা জরুরি। এই লক্ষ্যে কর রাজস্ব বাড়ানোর জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবসম্মত করনীতি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। যাতে প্রতি বছর জিডিপির ০.৫ শতাংশ হারে কর জিডিপির বাড়ানো সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে কার্যকর একটি মাধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল থাকতে হবে। ভর্তুকি হ্রাস করতে হবে। ব্যয় দক্ষতার উন্নতি ঘটাতে হবে। আর্থিক ঝুঁকিগুলোও চিহ্নিত করতে হবে।

এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা হ্রাস উদ্যোগকে আইএমএফ সবসময় অগ্রাধিকার দেয়। এর জন্য নন-পারফর্মিং ঋণ হ্রাস কৌশল বাস্তবায়নের উদ্যোগকে আরও সুনির্দিষ্ট ও গতিশীল হওয়া উচিত। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত আর্থিক খাতকে উন্নত করার জন্য ঝুঁকিভিত্তিক কার্যক্রমে নজরদারি অব্যাহত রাখা। এর জন্য সুশাস, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর উন্নতির জন্য আইনি সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে।

একইভাবে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় পৌঁছাতে সরকার যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার রাখার সংস্কারের গতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ, আরও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নতিরও কথাও বলছে আইএমএফ।

উল্লেখ্য, আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি ঢাকা সফরের পুরো সময় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির মূল্যায়ন করেছে। এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘রাইসির ঘটনায়’ উচ্ছ্বসিত মার্কিন সিনেটর

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনিয়ে পালাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্য

রাইসিকে উদ্ধারকাজে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে রাশিয়া

রাইসিকে উদ্ধারের সর্বশেষ অবস্থা জানাল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সংস্কারের দুদিন পরই উঠে যাচ্ছে কোটি টাকার কার্পেটিং!

বজ্রপাতে কলেজছাত্রের মৃত্যু

ঘুষ নিয়ে এএসআইয়ের দর-কষাকষির অডিও ভাইরাল

রাইসির খোঁজে যে ঘোষণা দিল এরদোয়ান

গণপিটুনির শিকার আ.লীগ নেতা

১০

রাইসির খোঁজে এগিয়ে এসেছে যেসব দেশ

১১

রাইসির খোঁজে ৩২ সদস্যের দল পাঠাচ্ছে তুরস্ক

১২

ইরানের প্রেসিডেন্টের দুর্ঘটনাস্থল থেকে মিলল সংকেত

১৩

কেন এত সময় লাগছে অনুসন্ধানে

১৪

টানা চারটি লিগ জয়ীদের এলিট ক্লাবে ম্যানসিটি

১৫

হেলিকপ্টার পাওয়ার বিষয়ে যা জানাল রেড ক্রিসেন্ট

১৬

রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টারে আর যারা ছিলেন

১৭

উন্নয়নের নামে রাতের আঁধারে শাহবাগে গাছ কাটার অভিযোগ

১৮

সবশেষ বিহারে ছিলেন এমপি আনার

১৯

‘অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে সরকার’

২০
X