ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। প্রিয় নেতাকে হারিয়ে হাজারো মানুষ যেমন মাতম করছেন, ঠিক তেমনি অনেকের মতে এ মৃত্যুতে তাদের কিছু যায় আসে না। তারা এতে দুঃখিতও নন। তাদের মতে, এ মৃত্যু ইরানে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে না। কিন্তু কেন তারা এমনটা মনে করছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি ঘটনাসংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় জানাচ্ছেন—ওয়াহেদুজ্জামান সরকার
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আকস্মিক মৃত্যু চিরবৈরী রাষ্ট্র ইসরায়েলে যে খুশির ঢেউ তুলবে, সে বিষয়ে সবাই নিশ্চিত। ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিকের উচ্ছ্বাসের খবরও সংবাদমাধ্যমে আসছে। কিন্তু খোদ ইরানে একটি শ্রেণি রাইসির মৃত্যু নিয়ে মোটেও দুঃখিত নয় বলে খবর আসছে। বিশেষ করে দেশটির নারীশ্রেণির একটি বিশাল অংশ তার মৃত্যুতে অনেকটা ভাবলেশহীন। নারীশ্রেণির এ অংশটাই তারা—যারা গত বছর হিজাববিরোধী আন্দোলনে ইরানের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত কাঁপিয়ে দেয়। রাইসির আমলে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হন মাশা আমিনি নামে ২২ বছর বয়সী এক কুর্দি তরুণী। ইরানের কঠোর হিজাব আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে তাকে সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করে এবং গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পরই পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখো মানুষ। ইরান ছাপিয়ে সে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অনেক দেশে। দেশের ভেতরের এ বিক্ষোভ অত্যন্ত কঠোর হাতে দমন করে রাইসি সরকার। বিক্ষোভকারীদের ওপর অত্যন্ত দমনপীড়ন শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় পাঁচ শতাধিক মানুষ। আহত হয় ১২ হাজারের মতো নারী-পুরুষ। গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকানো হয় আরও কয়েক হাজার মানুষ, যাদের সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারছে না। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা, যা রাইসি সরকারের গদিকে টালমাটাল করে দেয়। এ ঘটনায় রাইসি সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নারীরা বিতর্কিত হিজাব আইন প্রত্যাখ্যান করলেও সরকার তা বলবৎ রাখে। এ নারীরাসহ দেশটির প্রগতিশীল শ্রেণি রাইসির মৃত্যুতে দুঃখিত নয় বলে জানাচ্ছে। তেহরানের বাসিন্দা লায়লা নামে ২১ বছর বয়সের এক শিক্ষার্থী ফোনে রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবরে তিনি দুঃখ পাননি। তিনি বলেন, ‘তবে আমি এটা ভেবে দুঃখ পাচ্ছি যে, এমনকি রাইসির মৃত্যুর পরও এ দেশে কোনো পরিবর্তনই আসবে না।’ লায়লার মতো আরও বেশ কয়েকজন নারী রয়টার্সকে বলেন, ‘মৃত্যু দুঃখজনক বিষয়। কিন্তু এ মৃত্যু আমাদের দুঃখিত করছে না। কারণ রাইসি অনেক নিরপরাধ মানুষের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। তার কারণে অনেক নিরপরাধ মানুষ জেলের ভেতর চোখের পানি ফেলছে। তিনি ধর্মের আড়ালে নারীদের বন্দি করে রেখেছেন। তিনি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নন। কাজেই যারা মানুষের বৃহৎ একটা শ্রেণিকে মূল্য দিতে জানেন না, তাদের মৃত্যু আমাদের দুঃখিত করে না।’