মনোমোহন বসু কবি, নাট্যকার ও সাংবাদিক। যশোরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ১৮৩১ সালে ১৪ জুলাই মামার বাড়িতে তার জন্ম। পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার ছোট জাগুলিয়া গ্রামে। ছাত্রজীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ঈশ্বর গুপ্তের অনুপ্রেরণায় বাল্যকাল থেকেই মনোমোহনের সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও অক্ষয়কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় নিয়মিত তার রচনা প্রকাশিত হতো। পরবর্তী সময়ে নিজ সম্পাদিত সংবাদ বিভাকর ও মধ্যস্থ পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। মধ্যস্থ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি ভারতীয় জীবনধারা ও রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন এবং বিশেষভাবে ভারতীয়দের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজনের কথা প্রচার করেন। মনোমোহনের প্রধান অবদান বাংলা রঙ্গমঞ্চের ক্ষেত্রে। তার সময়ে মৌলিক নাটকের খুব অভাব ছিল। মনোমোহন অনেক পৌরাণিক নাটক রচনা করে মঞ্চনাটকের অভাব পূরণ করেন। তার নাটকগুলো পুরোনো যাত্রা-পাঁচালি-কথকতার সঙ্গে নতুন নাট্যরীতির মিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা নাটকের ইতিহাসে আদি, মধ্য ও আধুনিক যুগের মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করেছে। নাটকের নতুন এ ধারা তৎকালীন শিক্ষিত ও মার্জিত দর্শকদের কাছে খুব জনপ্রিয় ও প্রশংসিত হয়। এগুলোর মধ্য দিয়ে সে যুগের নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদের সুর ফুটে উঠেছে। ঔপনিবেশিক শাসনে পীড়িত এবং করভারে জর্জরিত ভারতের দুঃখ-দুর্দশার কথা এসব নাটকে বর্ণিত হয়েছে। তার রচিত নাটকগুলোর মধ্যে সতী শ্রেষ্ঠ। রামাভিষেক, প্রণয়পরীক্ষা, হরিশচন্দ্র, পার্থপরাজয়, রাসলীলা ও আনন্দময় উল্লেখযোগ্য নাটক। এ নাটকগুলো অপেরা বা গীতিনাট্যানুরূপ। মনোমোহন বসু প্রবর্তিত এই নতুন নাট্যধারা দ্বারা পরবর্তী সময়ে অনেকেই প্রভাবিত হন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ নাট্য রচনায় বসুর আদর্শই অনুসরণ করেন। ১৯১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এই গুণীজনের জীবনাবসান ঘটে।