মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে ছিলেন প্রেসবাইটেরিয়ান। প্রেসবাইটেরিয়ানদের নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ যাজকরা। কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোনো নির্দিষ্ট খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে তিনি ধর্মপ্রচারক (ইভানজেলিকাল) খ্রিষ্টানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছেন। অবশ্য তিনি নিয়মিত গির্জায় যান না। তা হোক, আমেরিকার অধিকাংশ ধর্মপ্রচারক প্রোটেস্ট্যান্ট মনে করেন, তাদের বিশ্বাসের পক্ষে লড়াই করছেন ট্রাম্প। কেমন সেই লড়াই?
হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বার আসার পর ট্রাম্প বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণা দিয়েছেন এবং এমন কিছু নীতি গ্রহণ করেছেন, যা আমেরিকান পুঁজিবাদকে আরও সুসংহত করবে। এ নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণ। অর্থনৈতিক শক্তি বা সামরিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করাই যার লক্ষ্য। যেমন—গাজা দখল। তবে গাজা দখল ও উপনিবেশ স্থাপনের প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এর আগেও আমেরিকা ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করেছে।
আবার ট্রাম্প যেভাবে কানাডা, ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল দখল করার কথা চিন্তা করছেন, তা আমেরিকার ‘কনটিনেন্টালিজম’ ও ‘ম্যানিফেস্ট ডেসটিনি’ ধারণার প্রতিফলন। এগুলো বহু পুরোনো। উনিশ শতকের আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ এগুলো। ঠিক সেভাবেই ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা, যা উনিশ শতকের উগ্র আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টদের উপনিবেশ স্থাপনের চিন্তার পুনরাবৃত্তি।
আমেরিকান দখলদারিত্ব: কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা ক্রমাগত আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। শুরুতে তিনি গাজার অধিকাংশ ফিলিস্তিনিকে জর্ডান বা মিশরে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন—অন্তত তাদের স্বেচ্ছায় গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘোষণায় তিনি আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, গাজার সব ফিলিস্তিনিকে উৎখাত করতে হবে এবং পুরো অঞ্চলটি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে।
এটি সেই একই ভূমি, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে আসছে এবং পুরো গাজাকে পরিণত করেছে ধ্বংসস্তূপে। ভূমধ্যসাগরের ফরাসি রিভেরার প্রতি আগ্রহী না হয়ে, ট্রাম্প এখন মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি রিভেরা গড়ে তুলতে চান। রিভেরা হলো ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় কিছু এলাকা, যা পৃথিবী জুড়ে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উৎখাত হওয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘উন্নত মানের বাসস্থান’ তৈরি করা হবে, যা হবে ‘একটি সুন্দর শহর, যেখানে তারা বাস করতে পারবে এবং মারা যাওয়ার ভয় থাকবে না। কারণ গাজায় থাকলে তারা নিশ্চিতভাবেই মারা যাবে’ বলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন। তবে এই তথাকথিত ‘উন্নতমানের বাসস্থান’ নির্মাণের খরচ বহন করতে হবে আরব দেশগুলোকেই—এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আমেরিকানরা ট্রাম্পের ভাষায় ‘মালিকানার ভিত্তিতে’ নতুন রিভেরা তৈরি করবে। মূলত, এটি হবে নতুন ধরনের উপনিবেশবাদ, যাকে সংবাদমাধ্যম সিএনএন পর্যন্ত ‘২১ শতকের উপনিবেশবাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছে, যদিও তারা সাধারণত ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজার মালিক হব এবং সেখানে পড়ে থাকা বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র ধ্বংস করার দায়িত্ব নেব। পুরো এলাকা সমতল করব, ধ্বংস হওয়া ভবনগুলো সরিয়ে ফেলব এবং সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব, যা বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান ও আবাসন সরবরাহ করবে। আমরা একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব, কিছু ভিন্নধর্মী কাজ করব।’
ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা থেকে স্পষ্ট, তার অধীনে গাজাকে এমন একটি অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে যেখানে ‘বিশ্বের নাগরিকরা’ এবং ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ একত্রে বাস করতে পারবে। তবে এ নতুন গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের কোনো স্থান থাকবে না। ট্রাম্প স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ‘পুনরায় ফিরে আসা’ বাস্তবসম্মত নয়।
পুঁজিবাদী ক্রুসেড: ট্রাম্প এবং ইসরায়েলিদের আসল আকাঙ্ক্ষা গাজার সমুদ্রতীর বা এর ‘রিভেরা’ নয়, বরং গাজার সমুদ্রসীমায় লুকিয়ে থাকা বিলিয়ন ডলারের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসসম্পদ। ট্রাম্প ও জায়নিস্ট উপনিবেশবাদীরা এ সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চায়, আর এজন্যই গাজাকে দখল করা তাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। জায়নিস্টরা হলো এমন একটি আন্দোলনের অনুসারী, যারা ঐতিহাসিক ইসরায়েল ভূমিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে মতাদর্শ ধারণ করেন।
ট্রাম্পের এ পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নতুন কিছু নয়। উনিশ শতকেও আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্ট মিশনারিরা ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। তারা চেয়েছিল এ অঞ্চলের ভূমি ও জনগণকে নিজেদের মতবাদ অনুযায়ী পরিবর্তন করতে।
উনিশ শতকের শুরুতেই ট্রাম্পের একসময়ের সহধর্মাবলম্বী প্রেসবাইটেরিয়ান আমেরিকান মিশনারিরা ফিলিস্তিনে এসেছিল। তারা চেষ্টা করেছিল ফিলিস্তিনি মুসলিম, অর্থোডক্স খ্রিষ্টান এবং প্রায় চার হাজার ফিলিস্তিনি ইহুদিকে ধর্মান্তরিত করতে। এ ছাড়া কিছুসংখ্যক লিথুয়ানীয় মেসিয়ানিক ইহুদির প্রতিও তাদের প্রচেষ্টা ছিল।
১৮৪৪ সালে, ব্রিটিশ অ্যাংলিকান মিশন ফিলিস্তিনে স্থাপিত হওয়ার পর আমেরিকান মিশনারিদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় এবং তারা সিরিয়া ও লেবাননে চলে যায়। তবে চলে যাওয়ার আগে তারা হাজার হাজার প্রোটেস্ট্যান্ট বাইবেল বিতরণ করে এবং ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ তাদের ব্রিটিশ ধর্মীয় সহযোগীদের হাতে দিয়ে যায়।
খ্রিষ্টান সাম্রাজ্যবাদের ‘শান্তিপূর্ণ ক্রুসেড’: উনিশ শতকের ইউরোপীয় খ্রিষ্টান বিজয়ের অংশ হিসেবে আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্ট মিলেনারিয়ান ও রিস্টোরেশনিস্টরা ‘শান্তিপূর্ণ ক্রুসেড’ নামে একটি আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা ফিলিস্তিনের জাফা শহরে কৃষি উপনিবেশ স্থাপন করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, সেখানে যেসব ইহুদি বসবাস করত, তাদের খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা এবং তাদের কৃষিকাজ শেখানো। তবে তাদের কাছে ইহুদিরা তখন ‘অলস’ ও ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রতি ‘অনাগ্রহী’ বলে মনে হয়েছিল।
১৮৫১ সালে আমেরিকার সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্টরা, যাদের তখন মিলেরাইটস বলা হতো (উইলিয়াম মিলারের অনুসারী), তারা ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে বসতি স্থাপন করে। পরে তারা জাফায় গিয়ে ‘মাউন্ট হোপ’ কলোনি তৈরি করল। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও আমেরিকান সামরিক হস্তক্ষেপ: আরেকটি উগ্র দল ডিকসন পরিবার ১৮৫৪ সালে জাফায় ‘আমেরিকান মিশন কলোনি’ স্থাপন করে। ফিলিস্তিনিরা এটি মেনে নেয়নি। ফিলিস্তিনিরা ১৮৫৮ সালে এই উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, আক্রমণ চালায়। তখন বেশ কয়েকজন কলোনিস্ট নিহত হয়। যারা বেঁচে ছিল, তারা আমেরিকায় ফেরত যায়।
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তৎক্ষণাৎ USS Wabash নামে একটি নৌযান পাঠায়, যা একটি সামরিক স্টিম ফ্রিগেট। আমেরিকা তখন অটোমান শাসকদের চাপ প্রয়োগ করে যেন তারা ফিলিস্তিনিদের বিচার করে।
এ ঘটনাগুলো দেখায় যে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপন করতে চেয়েছে এবং সে চেষ্টারই নতুন রূপ আজ ট্রাম্পের গাজার দখল ও শোষণের পরিকল্পনা।
প্রতিরোধের ইতিহাস: ১৮৬৬ সালে উগ্রপন্থি আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্ট মিলেনারিয়ান কারিগর ও কৃষকদের একটি দল মেইন থেকে এসে জাফায় আরেকটি উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করে। এই উপনিবেশটি পরিচিত ছিল ‘অ্যাডামস কলোনি’ নামে। ধর্মীয় নেতা জর্জ ওয়াশিংটন জোশুয়া অ্যাডামসের নামে নামকরণ করা হয়। অ্যাডামস মূলত একজন প্রাক্তন মরমন ছিলেন। ১৫৬ জন উপনিবেশবাদী সেখানে বসবাস শুরু করলেও মাত্র দুই বছর পর কলোনিটি ধ্বংস হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও অটোমান শাসকদের প্রতিবাদ: অ্যাডামস উপনিবেশ স্থাপনের আগে হোয়াইট হাউসে গিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (আমেরিকায় আদিবাসীদের গণহত্যার জন্য কসাই বলে পরিচিত) সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অটোমান শাসকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা চালান।
অ্যাডামস ফিলিস্তিনের দখলকে আমেরিকার ভূমি দখলের সঙ্গে তুলনা করেন। তবে ফিলিস্তিনিরা এ কলোনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের মুখে অটোমান শাসকরা কনস্টান্টিনোপলে মার্কিন দূতাবাসে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে জানায় যে, ‘স্থানীয় অধিবাসীদের তাদের নিজস্ব জমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং সেখানে আমেরিকান বসতি স্থাপন করা হচ্ছে।’ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অ্যাডামস ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন এবং তার সঙ্গে অধিকাংশ উপনিবেশবাদীকেও আমেরিকায় ফেরত পাঠানো হয়।
ধর্মীয় উপনিবেশ স্থাপনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা: অ্যাডামস যখন উপনিবেশ স্থাপনের উদ্যোগ নেন, তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, এ অঞ্চলকে ইউরোপীয় ইহুদিদের ‘প্রত্যাবর্তনের জন্য’ প্রস্তুত করা হবে, যা নাকি যিশুর দ্বিতীয় আগমনের পথ সুগম করবে। তবে তার উপনিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মাত্র ২০ জন আমেরিকান উপনিবেশবাদী ফিলিস্তিনে থেকে যায়।
জেরুজালেমে আমেরিকান উপনিবেশের চেষ্টা: ১৮৮১ সালে আরেকটি আমেরিকান ধর্মপ্রচারক প্রোটেস্ট্যান্ট পরিবার ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা চালায়। শিকাগোর হোরাশিও ও আনা স্পাফোর্ড ১৬ জন আমেরিকানকে নিয়ে জেরুজালেমে বসতি স্থাপন করেন যাতে যিশুর দ্বিতীয় আগমন দ্রুততর হয়। ১৮৯৬ সালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ৫৫ জন সুইডিশ ধর্মীয় উগ্রপন্থি এবং পরবর্তী কয়েক দশকে এটি ১৫০ জনে পরিণত হয়। তারা ফিলিস্তিনের এক জমিদার রাবাহ আল-হুসাইনির সম্পত্তি কিনে সেখানে বসতি স্থাপন করে। তবে তাদের পূর্বসূরিদের মতো তারা ধর্মান্তরকরণের জন্য অতিরিক্ত জোর দেয়নি। ফলে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি।
উপনিবেশের পতন ও আমেরিকান কলোনি হোটেল: এই কলোনিটি ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত টিকে ছিল, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত তা ভেঙে পড়ে। পরে তাদের কেনা হুসাইনি পরিবারভুক্ত সেই বাড়িটি ‘আমেরিকান কলোনি হোটেল’ নামে পরিণত হয়, যা বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেমের একটি প্রসিদ্ধ হোটেল।
এ ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট, আমেরিকা বহুবার ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও বাস্তবতার মুখে ব্যর্থ হয়েছে।
একটি ব্যর্থ মিশন: এই ইতিহাস শুধু ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য নয় যে, তার উপনিবেশ স্থাপনের পরিকল্পনা কোনো নতুন ধারণা নয়; উনিশ শতকে আমেরিকানরা একাধিকবার করার চেষ্টা করে। প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। এই ইতিহাস আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য প্রকাশ করে যে, ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমির প্রতি টান এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প ট্রাম্পের পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী আদর্শের চেয়েও অনেক শক্তিশালী।
উনিশ শতকের উগ্র আমেরিকান মিশনারিরা যেমন ফিলিস্তিনের জমি দখল করে এখানকার মানুষদের নিজেদের ধর্মে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল, ঠিক তেমনি ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনাও তার সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী ধর্মীয় মতাদর্শেরই প্রতিফলন।
ট্রাম্প যখন এই পরিকল্পনার ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন তার পাশে বসে ছিলেন যুদ্ধাপরাধী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের জন্য যতটা সম্ভব নৃশংসতা চালিয়েও তাদের দেশত্যাগ করাতে ব্যর্থ হন। অথচ তিনি এই গণবহিষ্কারের পরিকল্পনাকে ‘অসাধারণ’ বলে প্রশংসা করেছেন।
প্রশ্ন হলো, যদি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকান ও ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মনোবল ভাঙতে না পারে, তাহলে ট্রাম্প কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে, তিনি তার সাম্রাজ্যবাদী মুনাফাকেন্দ্রিক মিশনে সফল হবেন? তিনি কি সত্যিই মনে করেন যে, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ তৈরি করে, যেখানে ‘বিশ্বের নাগরিকরা’ থাকবেন, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কোনো স্থান থাকবে না, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর ইতিহাস এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছে ও সেই উত্তর হলো—‘না’।
লেখক: অধ্যাপক, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউইয়র্ক। তিনি বহু গ্রন্থ ও সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রবন্ধের লেখক। নিবন্ধটি মিডল ইস্টের মতামত বিভাগ থেকে অনুবাদ করেছেন আবিদুর রহমান