কৃষ্ণ কুমার শর্মা
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাফল্যের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ

সাফল্যের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ

ভোরের আলো ফুটতেই বাংলাদেশের আকাশে এক ভিন্ন সুর—একদিকে অসীম আশা; অন্যদিকে চাপা উদ্বেগ। লাখ লাখ তরুণ শিক্ষার্থী, যারা দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের বন্ধুর পথ পেরিয়ে আজ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। অপেক্ষা করছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। এ পরীক্ষা শুধু অর্জিত জ্ঞানের মূল্যায়ন নয়, বরং এক নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনারও প্রথম ধাপ। এ বিশেষ পরীক্ষা ঘিরে দেশজুড়ে অভূতপূর্ব উত্তেজনা ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

আজকের এসএসসি পরীক্ষা অন্যান্যবারের তুলনায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বছর সবার দৃষ্টি আকাশের দিকে—যেখানে সম্ভাবনার হাতছানি; একই সঙ্গে একটি জাতির সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার নীরব প্রতীক্ষা। সরকারের কঠোর নজরদারি, সমাজের সচেতনতা ও দৃঢ় মনোবল—সব মিলিয়ে এবারের পরীক্ষার সাফল্য যেন সময়ের দাবি। এটি কেবল একটি গতানুগতিক পরীক্ষা নয়, বরং দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জাতীয় অঙ্গীকার।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বার্তা স্পষ্ট করেছে। পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য একটাই—পরীক্ষার পরিবেশ থেকে যে কোনো প্রকার অসদুপায় দূর করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ন্যায়সংগত মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রথম নির্দেশনাই বিশেষভাবে নজর কেড়েছে—প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ (ত্রিশ) মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে। এই সময়সীমা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মানসিক প্রস্তুতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে নামার আগে নিজের অস্ত্র সাজিয়ে নেওয়া।

এ ৩০ মিনিট শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি শান্ত, স্থির পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হবে। যানজট বা যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ নির্দেশনা যেন এক ‘পূর্ব সতর্কতা’র বার্তা।

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা—পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা কেবল প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং পরীক্ষার পবিত্রতা রক্ষারও প্রতীক।

শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ বা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কিংবা অন্য কোনো অবৈধ উপায় অবলম্বন করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরীক্ষার সফলতা শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক এবং সমাজের সক্রিয় সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ‘এই পরীক্ষার সুষ্ঠুতা বজায় রাখতে সকলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।’

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন এগিয়ে আসতেই উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ পুরো জাতি এক অভিন্ন স্বপ্ন ও উদ্বেগে প্রহর গুনছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রত্যাশা দৃঢ় হচ্ছে যে, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা ন্যায়বিচার, সততা ও শৃঙ্খলার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।

বিশেষ নির্দেশনাবলি:

এক. পরীক্ষার শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আসন গ্রহণ করতে হবে।

দুই. প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তিন. প্রথমে বহুনির্বাচনী এবং পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে; উভয় পরীক্ষার মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না।

চার. পরীক্ষার উত্তরপত্র শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পরীক্ষার কমপক্ষে তিন দিন আগে সংগ্রহ করতে হবে।

পাঁচ. শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, খেলাধুলা এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে। তারিখ ও সময় প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে এবং শিক্ষার্থীদের অবহিত করবে। নম্বর অনলাইনে প্রেরণ করা হবে।

ছয়. OMR ফরমে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও বিষয় কোড যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত পূরণ করতে হবে। উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না।

সাত. কেবল রেজিস্ট্রেশন কার্ডে উল্লিখিত বিষয়সমূহের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।

আট. কোনো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা তার নিজ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে না। স্থানান্তরের সুযোগ নেই।

নয়. সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।

দশ. কেন্দ্র সচিব ছাড়া কেউ পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।

এগারো. অনিবার্য কারণে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের অধিকার শিক্ষা বোর্ড সংরক্ষণ করে।

১২. ফল প্রকাশের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য SMS-এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

লেখক: কলামিস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নখসহ মানুষের আঙুল পাওয়া গেল চিকেন রোলে, অতঃপর...

সাড়ে ৩১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ আটক ২

স্পাইডারম্যান সেজে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন যুবক, বড় জরিমানা করল পুলিশ

বাড়ি ফিরেছেন ফারুকী, তিশা লিখলেন আলহামদুলিল্লাহ

শোকজের খবরে যা বললেন ফজলুর রহমান

বিএনপির এক নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার

হাতাহাতির ঘটনায় ইসিতে এনসিপির অভিযোগ

‘কী বিক্রি করে নায়িকা হয়েছ’ শ্বেতাকে কটাক্ষ অভিনেত্রীর

চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে হাত-পা ভেঙে কুপিয়ে জখম

ভারতে আটক পুলিশ কর্মকর্তা আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি

১০

ক্রিকেট ম্যাচে ওভার না দেওয়ায় গুলি, ২ ভাই নিহত

১১

জামায়াত আমিরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাসায় গেলেন ইসহাক দার

১২

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থীসহ দুজনের প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ

১৩

লাইনচ্যুত বগি রেখেই ছেড়ে গেল ট্রেন

১৪

‘এটা কি আমার বাপের টাকায় করেছে? আমার নাম কেন থাকবে’

১৫

রুমিন ফারহানার বক্তব্যের ‘কড়া’ জবাব হাসনাতের

১৬

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেন বিলম্বে যাত্রীদের বিক্ষোভ

১৭

খালেদা জিয়া নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য : বুলু

১৮

সিংহ শিকারের জন্য বেরিয়ে আসে, মোদিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ বিজয়ের

১৯

‘বাইরে থেকে লোক এসে দেশে সড়ক বানিয়ে দেয়, এটা লজ্জার’

২০
X