বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্কোন্দল নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপির মধ্যে আধিপত্য, এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ কারণে এ কোন্দল বেড়েছে। দলটিতে বিভিন্ন এলাকায় নিজ নেতাকর্মীর মধ্যে রক্তারক্তির ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। বাড়ছে আহত ও নিহতের সংখ্যা। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এ-বিষয়ক তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই অন্তত ১৭৫টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘাতে নিহত হয় অন্তত ৩৬ এবং আহত হয় ১ হাজার ৮৩৩ জন। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য শুভ কিছু নয়।
রোববার কালবেলায় প্রকাশিত ‘দলীয় কোন্দলে রক্তাক্ত রাজনীতির মাঠ’ শীর্ষক প্রধান শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের বিশ্লেষণ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যে বেরিয়ে এসেছে অন্তর্কোদলের ফলে হতাহতের চিত্র। আসকের করা গবেষণার দাবি, সংঘটিত সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনাগুলোয় করা মামলার তথ্য বিশ্লেষণ, নিহতের স্বজনদের ভাষ্য, পুলিশ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে অন্তর্কোন্দলের ঘটনাগুলোর নেপথ্য কারণ। রাজনৈতিক আধিপত্য, এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ, দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি ও প্রতিষ্ঠান দখলের মতো নানা ঘটনাই এসবের জন্য প্রধানত দায়ী। দলগুলোয় অন্তর্কোন্দলের কারণে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১৩৬টি। এতে নিজ নিজ দলের অন্তত ২৯ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। একক রাজনৈতিক দল হিসেবে সারা দেশে এ সময়ে ৮৫ বার আত্মঘাতী সংঘাতে জড়িয়েছে বিএনপি। এতে দলটির অন্তত ১৫ নেতাকর্মী ও সমর্থক প্রাণ হারান। এ ছাড়া যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দল নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে অন্তত ৪০ বার। এতে প্রাণ হারায় ১১ জন। দলীয় অন্তর্কোন্দলে জড়িয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। একই সময়ে অন্তত পাঁচবার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে সংঘাতে জড়িয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেও অন্তত দুবার সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত মার্চেই সারা দেশে অন্তত ৭১টি রাজনৈতিক সংঘাত হয়। এতে নিহত হয় ২০ জন। এর মধ্যে দলীয় কোন্দলে নিহত হয় ১৮।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের সংঘাত আরও বাড়বে। কেননা তখন এসবের সঙ্গে যুক্ত হবে দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি। ফলে দলীয় হাইকমান্ডকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
আমরা জানি, সম্প্রতি দেশব্যাপী সংঘর্ষ-সহিংসতা, দখল-চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলোয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই সঠিক নয় বলে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একাধিকবার বলেছেন। তবে দলটির হাইকমান্ড এসব সংঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে, এ কথাও ঠিক। কেননা এরই মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাদের বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কারসহ নানা ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। এটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় দিক।
আমরা মনে করি, দলীয় কোন্দল হ্রাসে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব ও ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। যেহেতু বিএনপি এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং অতীতে একাধিকবার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে; এমনকি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলটির জয়ের সম্ভাবনা দেখছে বিভিন্ন মহল, সুতরাং দলটির নেতাকর্মীর কাছ থেকে দেশের মানুষ আরও দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করে। একই সঙ্গে যে কোনো অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, তাদেরও হতে হবে তৎপর।
মন্তব্য করুন