রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন, বিশেষ করে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ সর্বদাই নিত্যকার বিষয়। তবে সম্প্রতি ঢাকায় ছিনতাইপ্রবণতার মাত্রা জনপরিসরে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা যে ব্যাপকহারে বাড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। সাধারণত সন্ধ্যার পর বা রাতের বেলায় এসব অপরাধ সংঘটিত হলেও ইদানীং প্রকাশ্য-দিবালোকে ঘটছে এমন ঘটনা। শনিবার চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে ছোঁ মেরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এমনই একটি রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা নিতে হয়েছে এক ভুক্তভোগী নারীকে। তবে গুরুতর আঘাত পেলেও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি।
ঘটনাটি ওইদিন সকালের। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর গ্রিনল্যান্ড টাওয়ারের সামনে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই নারী। পরনে ছিল শাড়ি, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ এবং পাশেই ছিল একটি ট্রলি ব্যাগ। হঠাৎ সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার তার সামনে আসে। চলন্ত অবস্থাতেই গাড়িটির সামনের অংশের বাঁ পাশের জানালা দিয়ে একজন ঝুঁকে বেরিয়ে ছোঁ মেরে টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগটি। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী মাটিতে পড়ে যান। ওই অবস্থায়ই ব্যাগের সঙ্গে ওই নারীকেও গাড়ির সঙ্গে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। ঘটনাটি শনিবার ঘটলেও পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এটি সবার গোচরে আসে। ভিডিওর ওই দৃশ্যটি ছিল অতিভয়ানক! এ ঘটনার পর জনপরিসরে নিরাপত্তার ঘাটতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অবশ্য এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত ঘটনায় অপরাধীদের কারও গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।
আমরা জানি, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের সামনে যেসব বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসে তার মধ্যে অন্যতম আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অপরাধ দমন কার্যক্রমে আসে স্থবিরতা। থানাগুলো থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লুট হয়। পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ কর্মে দেখা যায় এসব অস্ত্রের ব্যবহার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুকতার সুযোগে দেশব্যাপী সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়। এরপর বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতির উন্নতিও হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। অন্তত প্রকাশ্য-দিবালোকে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ইঙ্গিত করে না। বরং ঢাকা শহরের ছিনতাইয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, ছিনতাইকারীরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠছে। গত কয়েক মাসে ঢাকায়ই ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেছে প্রায় ১০ জনের। অবশ্য ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। তারপরও কেন থামানো যাচ্ছে না এ অপরাধ কার্যক্রম—এটাই বিস্ময়কর।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। প্রতিনিয়ত সাধারণ জনপরিসরেও যদি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে বৈ কমবে না। আর এ ভয় ও আতঙ্ক জনজীবনকে যে বিপর্যস্ত করছে—এতে কোনোই সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতিতে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপরতা জরুরি। পুলিশের দৃশ্যমান সক্রিয়তা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে শাস্তি। এতে মানুষ আস্থা পাবে। কাটবে নিরাপত্তাহীনতা।
মন্তব্য করুন