কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৭:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

হিতাহিতজ্ঞানশূন্য

হিতাহিতজ্ঞানশূন্য

অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক হলেও সত্য যে, দেশে উন্নয়ন প্রকল্প মানেই জোচ্চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা! ওপেন সিক্রেট। অর্থাৎ সবাই মনে করেন, সরকারি যে কোনো প্রকল্প মানেই এর বড় একটি অংশের টাকা প্রকল্পের মূল কাজের বাইরে স্বার্থান্বেষীদের পকেটে চলে যাবে। অগ্রহণযোগ্য হলেও এটা এক ধরনের গা-সওয়া বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ধরনের কিছু ঘটনা মানুষকে ভাবায়, বিচলিত করে। প্রশ্ন জাগায়, মানুষের নৈতিক স্খলন আসলে কোন পর্যায়ে পৌঁছলে মরণব্যাধি ক্যান্সারের হাত থেকে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রেও এ জোচ্চুরি করতে হয়! আর অর্থলোপাটের এ বদনেশা কতটা আসক্তি তৈরি করলে, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করবে যে যন্ত্র, সে যন্ত্রের মান নিয়েও লোপাটকারীদের থাকে না কোনো ধরনের হিতাহিতজ্ঞান। এমনটাই ঘটেছে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রেডিওথেরাপি যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগে।

সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের চিত্র সত্যিকারই বিস্ময়কর। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালের শুরুতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জন্য দুটি রেডিওথেরাপি যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যন্ত্রটি ক্যান্সার রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তা নিষিদ্ধ। আর এই যন্ত্র সংগ্রহে দেওয়া হয় ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার কার্যাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবরের মধ্যে যন্ত্রগুলো প্রস্তুত ও প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ছয় বছর পরও সেই যন্ত্রগুলোর দেখা মেলেনি। বরং ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি কানাডাভিত্তিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেস্ট থেরাট্রোনিক্স আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, তারা যন্ত্র দুটি সরবরাহে অক্ষম। শুধু তাই নয়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর)-২০০৮-এর ৪২ ধারা অনুযায়ী, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে করা হয়নি কালো তালিকাভুক্তও। উপরন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে সিএমএসডি প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে যন্ত্র সরবরাহের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অত্যধিক। পাশাপাশি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও গুরুতর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য বলছে, যন্ত্রটি থেকে নির্গত গামা রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিকিরণের ফলে রোগীর শরীরে ক্ষত, পুড়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হয়।

স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত যন্ত্রটির ঝুঁকি ও কার্যকারিতা নিয়ে চিকিৎসা মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি ক্রয়ের উদ্যোগ কেন? দ্বিতীয়, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি এটি সরবরাহের ক্ষেত্রে চুক্তি ভঙ্গের পরও কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? এমনকি খোদ প্রতিষ্ঠানটির সূত্র ও সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের আর্থিক স্বার্থ জড়িত বা যোগসাজশের তীর ছুড়েছেন। আমরা জানি, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার। অথচ গত ছয় বছরে প্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপি যন্ত্র না থাকায় হাজারো মানুষ এ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্র হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্ভাব্য রাজস্ব। ব্যাহত হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা। আমরা মনে করি, মানুষের জীবনরক্ষাকারী এ প্রশ্নবিদ্ধ ও ক্ষতিকর যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ এবং এ নিয়ে অর্থ-আত্মসাতের প্রবণতা সংশ্লিষ্টদের চূড়ান্ত রকমের নৈতিক স্খলনেরই বহিঃপ্রকাশ। তা না হলে যেখানে রোগীর জীবনমরণ এবং চিকিৎসায় সর্বস্ব হারানোই নিয়তি, সেখানে রোগীর কল্যাণ দূরের কথা, তাদের সঙ্গে প্রতারণার চিন্তা কীভাবে আসতে পারে?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা, নিতে পারবে নিবন্ধন ছাড়াও

২৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাস নতুন করে লিখলেন ভারতীয় ওপেনার

হামাস-ইসরায়েলের সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

‘আইয়া দেখি মা-বাবাকে মাইরা খাটের ওপর বইসা রইছে’

নওগাঁর সাবেক এমপি ওমর ফারুক কারাগারে

হামজাদের খেলা দেখতে গেট ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন দর্শক

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকালে ৭৫ হাজার কেজি সুতা জব্দ

মায়ের লাশ আটকে সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা, ২০ ঘণ্টা পর দাফন

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন : এইচআরডব্লিউ

১০

রাকসু নির্বাচন / ১৬ দফার ইশতেহার দিল গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ

১১

ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা, তিন দিন পরও হয়নি মামলা

১২

হঠাৎ খুমেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বিপাকে রোগীরা

১৩

‘মবোক্রেসি আমাদের ব্যর্থতা, সামাল দেওয়া যায়নি’

১৪

‘চন্দন কাঠ’ ভেবে উৎসুক জনতার ভিড়, না বুঝেই চলছে কেনাবেচা

১৫

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে গণসমাবেশ ও মিছিল

১৬

ফেসবুকে যে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে মেটা

১৭

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

১৮

বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, শয্যা সংকটে মেঝেতে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা

১৯

দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি

২০
X