কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

যার দুকূল গেল…

যার দুকূল গেল…

নদীভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলোর দুঃখ-দুর্দশা-দুর্ভোগ কেউ নিজ চোখে না দেখে থাকলেও তা অনুধাবন করা কঠিন কিছু নয়। একসময় যাদের নিজের জমিতে বসতভিটা, কৃষিজমিসহ সাজানো একটি সংসার ছিল, নদীভাঙনে সে মানুষই হয়ে পড়েন নিঃস্ব, সহায়সম্বলহীন, উদ্বাস্তু। বেঁচে থাকার জন্য কষ্টেসৃষ্টে কোনোরকম কোথাও গুঁজে দিতে হয় জীবনকে। পরিতাপের বিষয়, যুগের পর যুগ কিংবা দশকের পর দশক পেরিয়ে যখন সেই নদীতে চর জাগে; ভাঙনকবলিত মানুষের আগের জায়গা যখন দৃশ্যমান হয়, তখন তা ফিরে পেতে পোহাতে হয় নদীভাঙনের চেয়েও বেশি দুর্ভোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জমির মালিক ফিরে পান না নিজ জমি। এ ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা যেমন রয়েছে; তেমনি থাকে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের উৎপাত। ভূমিদস্যুদের সঙ্গে আবার রয়েছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। ভাঙনকবলিত মানুষের এ দুঃখগাথা কিছুটা অনুধাবন করতে প্রখ্যাত গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার রচিত নদীকে কেন্দ্র করে মর্মস্পর্শী গানটির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। বহুশ্রুত গানটির একটি চরণ এমন—‘এ কূল ভেঙে ও কূল তুমি গড়ো,/যার একূল ওকূল দুকূল গেল/তার লাগি কি করো’। বাস্তবে অভিযোগটির সত্যতা দাঁড়িয়েছে এমন—শুধু নদী নয়, সমাজ বা মানুষও গ্রাস করে কূল। ভাঙনকবলিত এসব মানুষের এক কূল গ্রাস করে নদী। আর হাবুডুবু খায় এসে আরেক কূলে, অসহায় উদ্বাস্তু অবস্থায়!

সোমবার দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এমন একটি হতাশার চিত্র বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, নদীতে বিলীন হওয়া জমির অবস্থান ও কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সে জমির ওপর ভুক্তভোগীর আর মালিকানা থাকে না! আবার একসময় তা ফিরলেও আইনের মারপ্যাঁচে হয়ে যায় সরকারের খাসজমি। খাসজমি নিজের করতে পড়তে হয় নানা জটিলতায়। দেশের বিভিন্ন নদনদীপাড়ে ভাঙনের শিকার লাখ লাখ মানুষ আজ এ বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে আইনি জটিলতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা ও অপতৎপরতা।

জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে দুবার এ আইন আংশিক পরিবর্তন হয়। তবে মালিকানা ধরে রাখার ৩০ বছরের যে সময়সীমা ছিল, তা বাতিল হয়নি। আইন অনুযায়ী, জমির মূল মালিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেলেও জমি যদি ৩০ বছরের বেশি নদীর মধ্যে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে জমিতে তার আর অধিকার থাকবে না। অথচ এসব জমি দখলে রয়েছে ভূমিদস্যুর দৌরাত্ম্য। অভিযোগ রয়েছে, ভূমিদস্যুরা এসব জমি জোরপূর্বক দখল করে, ঘর তোলে; এমনকি সেই জমি বিক্রিও করে। কিন্তু জমির প্রকৃত মালিক নদীভাঙা ভূমিহীনরা তা পারেন না। এমন অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দাবি তুলছেন, নদী ভাঙলে জমি খাস—সরকারের এ আইন প্রত্যাহার এবং জমির মালিকানা ও তাদের স্বত্বাধিকার ফেরতের। তারা বলছেন, ‘নদী ভাঙবে জমি তার, থাকবেও তার। খাস কেন হবে?’ আইনজ্ঞরা বলছেন, এ-বিষয়ক আইন সংশোধন করে জনকল্যাণমূলক ও সময়োপযোগী করতে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।

এ কথা স্মরণে রাখা জরুরি, মানুষের কল্যাণ তথা জনস্বার্থেই তৈরি হয় আইন। আবার তা মানুষের কল্যাণেই প্রয়োজনীয় সংশোধন বা বাতিলও করা হয়। বিদ্যমান আইন যদি ভাঙনকবলিত মানুষের দুর্দশার কারণ হয়, তবে অবশ্যই তাকে মানুষের কল্যাণ উপযোগী করা অত্যাবশ্যকীয় এবং সে উদ্যোগ নিতে পিছপা হওয়া যাবে না। পাশাপাশি ভাঙনের কবলে পড়া এসব জমির ওপর ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে অভিযুক্ত ভূমি অফিসগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। আমাদের প্রত্যাশা, নদীভাঙন রোধ ও ভাঙনকবলিত মানুষের দুঃখ লাঘবে আইনি সংস্কারসহ বিদ্যমান সব ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাথায় গুলি ঠেকিয়ে প্রকাশ্যে বিপুল টাকা ছিনতাই

কমেছে স্বর্ণের দাম, কত টাকা ভরি আজ

স্ত্রী অল্পতেই রাগছেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ 

টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড

৪ স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

রোজা কবে শুরু হতে পারে, জানাল আমিরাত

‘মহান এই নায়ককে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত’

ঢাকায় হালকা বৃষ্টির আভাস

পুকুরে দেখা মিলল কুমিরের

শিক্ষকের ভুলে পরীক্ষা দেওয়া হলো না দুই শিক্ষার্থীর

১০

সন্ধ্যায় জানা যাবে পবিত্র আশুরার ছুটি কবে

১১

যুক্তরাজ্যের এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান ভারতে

১২

বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি দিচ্ছে আকিজ গ্রুপ

১৩

সন্তান কান্না করায় গলা কাটলেন পাষণ্ড বাবা

১৪

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সর্বশেষ ঘটনাবলি

১৫

ফেসবুকে প্রেমিকাকে ভালোবাসি লিখে ছাদ থেকে শিক্ষার্থীর লাফ

১৬

এইচএসসি পরীক্ষা আজ, অংশ নিচ্ছেন ১২ লাখ শিক্ষার্থী

১৭

২৬ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৮

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহতা আরও বাড়ছে

১৯

বৃহস্পতিবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

২০
X