আজ ৫ সেপ্টেম্বর, বাংলা লোকসংগীত তো বটেই, উপমহাদেশের কালজয়ী লোকসংগীতশিল্পী আবদুল আলীমের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। আবদুল আলীম ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) মৃত্যুবরণ করেন। লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন আবদুল আলীম। পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি ও ইসলামী গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
কণ্ঠস্বরের অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে এ কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য আগ্রহ জন্মে। ওই অল্প বয়স হতেই বাংলার লোকসংগীতের এ অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসলো পথে’। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সুযোগ পাননি আবদুল আলীম। অন্যের গান শুনে শুনে তিনি শিখতেন আর বিভিন্ন পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোকসংগীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
তিনি আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদারউদ্দিন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আবদুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আবদুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে।
আবদুল আলীমের বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে—নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা, সর্বনাশা পদ্মা নদী, হলুদিয়া পাখি, মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম, এই যে দুনিয়া, দোল দোল দুলুনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ-মন-প্রাণ, মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়, আর কতকাল ভাসবো আমি, কে যাও ভাটির দেশের নাইয়া, শোনো গো রূপসী কন্যা গো, প্রেমের মরা জলে ডোবে না, চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি, ও যার আপন খবর, এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া, নবী মোর পরশ মণি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে গান করেছেন আবদুল আলীম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার। বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সংগীত পরিবেশন করে আবদুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে।
মন্তব্য করুন