এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এবং বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ও মহলের বহুপ্রতীক্ষিত দাবি হচ্ছে—ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের ঘোষণা। আলোচিত বিষয়টি ঘিরে এসব জল্পনা-কল্পনা-সংশয়-দোলাচল কি এবার দূর হতে যাচ্ছে? নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখের ঘোষণা কি আসতে যাচ্ছে?
শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৪টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এমনই একটি মন্তব্য করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন, তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় হচ্ছে এটা। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন—এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।’ নির্বাচনের তারিখের সম্ভাব্য ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির এ নেতা আরও বলেন, ‘এর (নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা) চেয়ে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ অবশ্য এ বিষয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আপত্তি তুলেছে। তাদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হওয়া উচিত। তা না হলে বিভ্রান্তি রয়ে যাবে।
এদিকে এদিনই নির্বাচন ভণ্ডুলের অপচেষ্টা রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
বলা বাহুল্য, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে একটি সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া সম্ভবত এ পরিস্থিতির অবসান সম্ভব নয়। কেননা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর এমন একটি সময় নির্বাচনের দিন-তারিখের ঘোষণা আসবে—এ বার্তাটি তাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মানুষ। অবশ্য সংশয় যে পুরোপুরি দূর হয়েছে, তাও নয়। কেননা এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজিরও রয়েছে, যেখানে নির্বাচনের দিন-তারিখ এবং তপশিল ঘোষণার পরও নির্ধারিত সময়ে সে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়নি। নজিরবিহীন ঘটনাটি ছিল ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্ধারিত নির্বাচন নিয়ে। তখন এক নির্বাচনের জন্য পাঁচবার তপশিল ঘোষণা করা হয়। পরে ১১ জানুয়ারি স্থগিত করা হয় নির্বাচন কার্যক্রম। ফলে এ কথা বলাই যায় যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ এ নিয়ে জনমনের সংশয় সম্পূর্ণভাবে দূর হওয়ার নয়। তবে আমরা আশাবাদী হতে চাই যেন দ্রুতই নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি স্পষ্ট বার্তা আসে এবং সব সংশয়ের অবসান ঘটে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব রাজনৈতিক দল ও দেশের সব মানুষের যে সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা, সে ব্যাপারে সর্বাত্মকভাবে আন্তরিক হবে সবপক্ষ।
মন্তব্য করুন