

বিজ্ঞপ্তির শর্তভঙ্গ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে ১ সহকারী অধ্যাপক পদের বিজ্ঞাপন দিয়ে ২ পদে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল বিভাগটিতে ১ জন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যেখানে লিখিত পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ পান একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ২ সহকারী অধ্যাপক।
তারা হলেন- মো. মামুনুর রশিদ ও শিমলিন জাহান খানম। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষায় তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে আমন্ত্রণ পান মোহাম্মদ রকি খান চৌধুরী নামের আরেক প্রার্থী। পরে ১২ আগস্ট উক্ত ৩ প্রার্থীর মাঝেই হয় লিখিত পরীক্ষা এবং উত্তীর্ণ হন সবাই। একই দিনে অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ডে সাক্ষাৎকার দিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন শিমলিন জাহান খানম। অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন মোহাম্মদ রকি খান চৌধুরী।
তবে এরপরই ঘটে বিপত্তি। উক্ত পদের বাছাই বোর্ডের কার্যবিবরণীতে যুক্ত করা হয় মোহাম্মদ রকি খান চৌধুরীকে। মূলত, শিমলিন জাহান খানমের সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী নিয়োগ হওয়ার পর তার সহযোগী অধ্যাপক পদটি শূন্য হবে বলে আগেই সেই পদে অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সুপারিশ করা হয় মোহাম্মদ রকি খান চৌধুরীকে; যা অনুমোদন পায় ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯তম সিন্ডিকেটে। এরপর ৩১ আগস্ট নিজ পদে যোগদান করেন শিমলিন খানম এবং ১২ অক্টোবর যোগদান করেন রকি খান। এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগটির স্বচ্ছতা, প্রতিযোগিতা ও নিয়মের বৈধতা নিয়ে।
নিয়োগটিতে শূন্যপদে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার না করে সহযোগী অধ্যাপক পদে সরাসরি অস্থায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করায় পদটিতে যথাযথ প্রতিযোগিতা হয়নি, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের, "প্রজাতন্ত্রের যে কোনো নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ" ধারাটিও লঙ্ঘন হয়।
এই নিয়োগের বাছাই বোর্ডে সভাপতি হিসেবে উপাচার্য ও সদস্য হিসেবে ট্রেজারার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর যেই পদ শূন্য হবে, সেই পদে আগে থেকেই একজনকে নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া, অপ্রাসঙ্গিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যায়। শূন্যপদে বিজ্ঞাপন দিলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আরও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যেত।
অন্যদিকে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বাছাই বোর্ড কীভাবে সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের সুপারিশ করে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে ইউজিসির অনুমোদন রয়েছে কি না জানতে চাইলে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেকশন বোর্ডের অনেককিছু বিষয় থাকে। এখন বাইরে আছি, পরে কথা বলব।
নিয়োগটির বৈধতা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগটি বাছাইবোর্ড কর্তৃক সুপারিশ করা হয় এবং পরবর্তীতে সিন্ডিকেটেও অনুমোদিত হয়। যেহেতু সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, তাই সেখান থেকে অনুমোদন হলে সেই নিয়োগকে অবৈধ বলার সুযোগ নেই। তবে এটি আদর্শ পদ্ধতি নয়।
নিয়োগটির বিষয়ে বাছাই বোর্ডের সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাছাই বোর্ড যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সিলেকশন বোর্ড যখন বসেছে, সবাই মনে করেছে একজন পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট পাওয়া গেছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন, এরকম ব্রাইট ক্যান্ডিডেট সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই সিলেকশন বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করেছে। সিন্ডিকেটেও বিষয়টি এভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এবং অনুমোদন হয়েছে। এমন যদি হয় হার্ভার্ড থেকে কেউ এসেছে, তাকে চাইলেও সিন্ডিকেট সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন, বিজ্ঞাপনে যদি একটি পদ উল্লেখ থাকে, তাহলে একজনকেই নিয়োগ দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের পদের সংখ্যার বাইরে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
নিয়োগটির বৈধতা বিষয়ে ইউজিসির এক সদস্য বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রার্থী যদি নিয়োগ পান, তাহলে তার শূন্য পদে একই সিলেকশন বোর্ডে আরেকজনকে সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই। এটি আইনসম্মত নয় এবং সম্পূর্ণ অবৈধ। সিন্ডিকেটে অনুমোদন হলেও ইউজিসির কাছে অভিযোগ এলে এই নিয়োগ বাতিল হবে। কারণ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ১টি পদের চাহিদা উল্লেখ ছিল। যদি শূন্য ঐ পদে কাউকে নিয়োগ দিতে হয়, তবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ দিতে হবে।
মন্তব্য করুন