

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবশ্য গত বছর অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেরও অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগ শুরু থেকেই চলমান রয়েছে। গত এক বছরে দেশের রাজনীতি নানারকমের চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হলেও একাধিক প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যকার বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে মতভিন্নতা সে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা জানি, নানা আলোচনা ও জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়। এখন পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা তাতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরও দলগুলোয় মতভিন্নতা কাটেনি। বরং পরিস্থিতি উল্টো কথাই বলছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। কেননা, নানা ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে মতের অমিল দেখা যাচ্ছে। কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতসহ সাতটি দল। অমিলের প্রমাণও দেখা গেল মঙ্গল ও বুধবার। এ দুদিনে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন এবং নিজেদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরেন। জামায়াতে ইসলামী বলছে, দাবি না মানলে তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের ব্যাপারে গণভোট চায়। এ ছাড়া তাদের রয়েছে নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়েও নিজস্ব অবস্থান। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, শাপলা প্রতীক না দিলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। পাশাপাশি পোলিং এজেন্ট কারা হবেন কিংবা নির্বাচন পরিচালনা কীভাবে হবে—সেসব বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এমনকি গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নিয়ে দলটির অবস্থান ভিন্ন। দলগুলোর এমন কঠোর অবস্থান সংসদ নির্বাচন আরও জটিল করে তুলছে।
শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, একদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রেখেছে; অন্যদিকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে দলগুলো। আবার দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়েও আশঙ্কার কথা তুলে ধরছেন। শুধু তাই নয়, দলগুলো যার যার দাবিদাওয়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে হাঁটছে। এতে স্পষ্ট যে, তাদের এক ছাতার নিচে আনা সম্ভব হয়নি।
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার চলমান অনৈক্য কোনো শুভবার্তা নয়। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন। সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে তা অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বারবার ‘ইতিহাসের সেরা নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের কথা উচ্চারিত হয়েছে খোদ প্রধান উপদেষ্টার কণ্ঠে। দেশের মানুষ আশান্বিত হয়েছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচন ব্যবস্থাকে এ সরকার আবার পুনর্জাগরিত করবে। মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাবে, পছন্দের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে পারবে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান পরিস্থিতি সে ব্যাপারে যে শঙ্কার উদ্রেক করছে, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের প্রত্যাশা, চলমান এই শঙ্কা দূর হবে। রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর কল্যাণ বিবেচনায় ঐকমত্যে পৌঁছাবে। অন্যথায় এ অনৈক্য বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মন্তব্য করুন