

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার যে রাজনীতিবিদ, তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। অমানবিক আচরণে বিদ্ধ করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাকে। মিথ্যা মামলায় জেলে পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে। স্বামী-সন্তানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে ঠিকভাবে চিকিৎসাটা পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি দেশের জনপ্রিয়তম এ নেত্রীকে। বুকের ধন কনিষ্ঠ সন্তানকে চিরতরে হারিয়েছেন। আরেকজন সন্তানকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। পরিবার-পরিজন বলতে তেমন কাউকেই কাছে থাকতে দেওয়া হয়নি। বছরের পর বছর ধরে একপ্রকার নির্বাসিত কয়েদির মতো অপমানজনক অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে, অপবাদ আর অপমানের এমন লৌহশৃঙ্খলের ভেতর দিয়ে নিয়ে গেলেও, মানুষের মন থেকে কিন্তু মুছে দেওয়া সম্ভব হয়নি তাকে। বরং দিন দিন তার প্রতি আপামর জনতার শ্রদ্ধাই শুধু বেড়েছে।
আশ্চর্যের বিষয়, এত কিছুর পরও কাউকে দোষারোপ করে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। নিজ কষ্ট থেকে কোনো রাগ কিংবা ক্ষোভও প্রকাশ করেননি। উপরন্তু, জুলাই বিপ্লবের পর দেশের কথা ভেবে নেতাকর্মীদের শান্ত ও সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ দেশে বহু মানুষ আছেন, যারা বিএনপি করেন না কিন্তু দেশপ্রেমিক, তাদের কাছেও সব থেকে প্রিয় এ মহান নেতা। আমাদের গণতন্ত্রের মা, আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আপনি বাংলাদেশের মানুষের হৃৎস্পন্দন। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশা সবার।
খালেদা জিয়া—আজ একটি নাম নন, কোনো একটি দলের শুধু কাণ্ডারি নন, তিনি শুধু তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর জননীও নন, তিনি আজ পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি ভাগ্যাহত মানুষের আর্তনাদের মুখচ্ছবি—প্রতিটি স্বাধীনতাকামী মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। এই দেশে নেমে আসা সমূহ সব বিপদ-আপদ আর অন্ধকারে তিনিই একমাত্র আলো, দুর্ভেদ্য এক বর্ম।
ইতিহাসের প্রতিটি সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হন লিংকন বা ম্যান্ডেলা আর তেমনি বাংলাদেশের জন্য খালেদা জিয়া। ভবিষ্যৎ ইতিহাস নির্মাণে আজকের জন্য, এই অতি জটিল মুহূর্তের জন্য খালেদা জিয়া হয়ে উঠেছেন আমাদের চেতনার অনির্বাণ শিখা। তিনি বাদে বাংলাদেশকে যেন কোনোভাবেই সম্পূর্ণ মনে হয় না। বাংলাদেশ মানেই আজ খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ আর খালেদা হয়ে উঠেছে পরিপূরক শব্দযুগল। দীর্ঘ হতাশার স্রোত পাড়ি দিয়ে ঠিক যখন দেশ ও জাতি এক সুর-এক লয়ে সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত রচনায় হাত লাগিয়েছে; ঠিক যখন সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জাগরণকে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় আবার ফেরতের দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় ঐক্যবদ্ধ, তখনই মহীয়সী এ নারী, সর্বজনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়া ঐক্যের অনন্য এক প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। খালেদাই বাংলাদেশ—এমন উচ্চারণই আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে উচ্চকণ্ঠ হয়ে ধ্বনিত হচ্ছে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে—রাজনীতির দীর্ঘ এবং কঠিনতম রাস্তা পাড়ি দেওয়া অনন্য ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। আজ তিনি অসুস্থ, নীরব, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন! তবে তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মানুষের আত্মায় আলো হয়ে জ্বলজ্বল করছে। তিনি এমন এক নেত্রী—যিনি ক্ষমতার মসনদে বসে আরামের জন্য লালায়িত ছিলেন না কোনোদিন বরং গণতন্ত্রের রুক্ষ পথে কাঁটায় ভরা পথ ধরে হেঁটেছেন—যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে ইতিহাসকে আলোকিত করেছেন। হারিয়েছেন জীবনসঙ্গী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে, হারিয়েছেন আদরের সন্তান কোকোকে, হারিয়েছেন স্বাধীন চলাফেরার অধিকার। কারাগারের দেয়াল তার নিঃশ্বাসকে চেপে ধরেছিল বহুবার, কিন্তু তার মনকে মোটেই ভাঙতে পারেনি।
খেয়াল করে দেখুন, কত কঠিন ঝড়ঝাপ্টা তার জীবনে এসেছে, তবুও গণতন্ত্রের মা কোনোদিন ভেঙে পড়েননি। ভোর, দুপুর, গভীর রাত—সময়ের কোনো বাধাই তিনি মানেননি। ছুটে গেছেন মানুষের কাছে—জেলার পর জেলা, ইউনিয়নের পর ইউনিয়নে। বাংলাদেশে এমন খুব কম জনপদই আছে, যেখানে তার পায়ের চিহ্ন পড়েনি। রাত তিনটায়ও জনসভায় কথা বলেছেন, শুধু এ কারণে যে, মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করছিল। ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে থেকেছেন মাঠে—কারণ জনগণই ছিল তার শক্তি, তার বিশ্বাস। জনগণের ভরসায় জায়গায় শুধু তারই যে ছিল স্থান।
জীবন-মৃত্যুর মালিক তো আল্লাহ। মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আজ কোটি মানুষ দোয়ায় মশগুল। তার সঙ্গে আছে আপামর জনসাধারণের হৃদয়ের আকুতি। মানুষের হৃদয়ই তো জানে—এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন অটল, অবিচল, সংগ্রামী নেতার জন্ম খুব কমই হয়েছে। খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন—তিনি একটি সময়, একটি আন্দোলন, একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বাস, একটি অদম্য নেতৃত্বের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসা চলছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান প্রতিটি মুহূর্তে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জুবাইদা রহমান, যিনি মেডিকেল বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, গণতন্ত্রের মায়ের চিকিৎসাসংক্রান্ত প্রতিটি ধাপেই তিনি নজর রাখছেন সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ নিয়ে।
হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন। কিন্তু সিসিইউতে প্রবেশের অনুমতি নেই—ইনফেকশনের ঝুঁকির কথা ভেবে। দূর থেকে শুধু চোখ ভেজা প্রার্থনায় তাকে দেখছে; আল্লাহকে ডাকছে আর নিজের ভাষায় বলছে—‘মা, আপনি ভালো হয়ে উঠুন।’ মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে আর্জি করছে, যেন তিনি ভালো হয়ে ওঠেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করায় তিনি এখন এসএসএফের বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আছেন। তবুও মানুষের ঢল যেন থামে না! দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রার্থনায় নেত্রীর আরোগ্য কামনাই আজ প্রধান হয়ে উঠেছে।
দেশবাসী আজ আন্তরিকভাবে আশাবাদী—শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই তাকে লন্ডনে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে। সেখানে যে হাসপাতাল তাকে কিছুদিন আগে নতুন আশার আলো দেখিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে। উন্নত বিশ্বের বড় বড় ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। কয়েকটি দেশের নামজাদা ডাক্তারদের সমন্বয় করে মায়ের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা—একজন দায়িত্বশীল ছেলে হিসেবে তারেক রহমানের কূটনৈতিক সাফল্য বটে। বিশ্বের নানা দেশের বেশ কজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নেত্রীর অসুস্থতা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন; তাদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। সহযোগিতার হাতও বাড়িয়েছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া—তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন! আবার যেন স্বজন, সন্তান ও দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসেন! যেন আবার তারই প্রেরণাদায়ক নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন শক্তি পায়। খুঁজে পায় নতুন পথ। দেশবাসীর দোয়া, প্রত্যাশা—সবই আজ এক বিন্দুতে এসে মিশেছে—তিনি সুস্থ হয়ে ফিরবেন, ইনশাআল্লাহ!
লেখক: অধ্যাপক, গবেষক ও ট্রেজারার
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিরেক্টর (ফিন্যান্স), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন
মন্তব্য করুন