আর কে চৌধুরী
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪, ০৩:০৮ এএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ০৭:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুন

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেকার বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত।

অথচ যাদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। মানসম্মত শিক্ষার অভাবেই দেশে বেকারত্ব, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি বাড়ছে। শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার। জনগোষ্ঠী বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে আনুষ্ঠানিক খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটা বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে তারা।

এখন করণীয় কী? কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, যোগ্য প্রার্থীর তুলনায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ একেবারে কম। বেসরকারি খাতে চাকরির বাজার সেভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। অন্যদিকে সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি খাতের চাকরি সেভাবে আকর্ষণীয় নয়। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যায় না।

ফলে দেশের বেসরকারি খাতের অনেক উচ্চপদে বাইরের দেশ থেকে জনশক্তি নিয়োগ করা হয়। বিশেষায়িত এসব পদে নিয়োগের বিপরীতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। ইউএনডিপি তাদের এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অতিক্রম করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সুযোগ কি কাজে লাগাতে পারছে বাংলাদেশ? কেন পারছে না?

আমরা কথায় কথায় কর্মমুখী শিক্ষার কথা বলি। এখন দেখার বিষয় আমাদের শিক্ষা কতটা কর্মমুখী হয়েছে? আদৌ কি হয়েছে? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মেধা। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুনবাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম মেধাবী। তাদের যথাযথভাবে তৈরি করে কাজে লাগাতে পারলে আগামী দিনের বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এ মেধাবীদের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না হওয়ায় প্রতি বছর কর্মক্ষম মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। কারণ প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে দেশের কর্মক্ষম শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ কাজের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ দেশের সার্বিক উন্নয়নে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন কর্মপরিবেশের উপযোগী একটি শ্রমশক্তিও তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থান কী করে সৃষ্টি করা যাবে? কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। দেশে প্রতি বছর নতুন জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে। তাদের উৎপাদনশীলতায় নিয়ে আসতে হবে। তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যথাযথ কাজে লাগাতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এখন জরুরি। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে দেশ এগিয়ে যাবে।

দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৭০ শতাংশের মতো হলেও মোট জনশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বেকার। যাদের অধিকাংশই শিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, কিংবা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে লক্ষাধিক, যাদের বেশিরভাগের কর্মসংস্থান হয় না। ফলে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এমনিতেই বিশ্ব মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বেই কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান যে হারে বাড়ছিল, তা হ্রাস পেয়েছে নানা কারণে। তাই অনেকে শ্রম বেচতে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা অস্থিরতার কুফল যেসব দেশ ভোগ করছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। সারা বিশ্বে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থানের কারণে বসবাস করছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। তাই বলা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। পরিস্থিতির অবনতি রোধে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ কোনোটাই মূলত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে বৃহৎ এ জনগোষ্ঠী সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।

কিন্তু এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সঠিক হবে না। তাই অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন এ দেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে সমাজে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আসলে যুবসমাজই হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে দেশের এ বিশাল শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার হওয়া দরকার। এরাই নিজেদের মেধা ও মনন শক্তি ব্যবহার করে নির্ধারণ করবে দেশের আগামী দিনের চলার পথ। সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়ন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সম্ভাবনার দিগন্তে সাফল্যের পতাকা উড়িয়ে দেশ

অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সামনেও সোনালি ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হবে কি না, তা নির্ভর করছে সৃষ্ট সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে তার ওপর। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে সমস্যা হলো জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বেকার। যুব জনগোষ্ঠীর একটি অংশ অভিভাবকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যুবসমাজের কর্মসংস্থানের যথাযথ পদক্ষেপ যেমন দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, তেমনি এ ক্ষেত্রের ব্যর্থতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সোনালি ভবিষ্যতের স্বার্থেই কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতি আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সঠিক হবে না। তাই অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে এ দেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে সমাজে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আসলে যুবসমাজই হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে দেশের এ বিশাল শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার হওয়া দরকার। এরাই নিজেদের মেধা ও মননশক্তি ব্যবহার করে নির্ধারণ করবে দেশের আগামী দিনের চলার পথ।

বাংলাদেশ ছিল প্রায় সম্পূর্ণরূপে একটি কৃষিনির্ভর দেশ। মানুষের কর্মসংস্থানও ছিল মূলত কৃষি ক্ষেত্রে। যেহেতু কৃষিজমি বাড়ছে না, তাই বর্ধিত জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিবহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। অতীতে সেই প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে না এগোনোয় বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তরুণ-যুবকরা বাধ্য হয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা কিংবা অন্যান্য উপায়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে। সাম্প্রতিককালে অবৈধভাবে বিদেশযাত্রার সেই ধারা কিছুটা হলেও কমে এসেছে। সম্প্রতি দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ক্রমান্বয়ে এর গতি বাড়ছে। সেইসঙ্গে দেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। বর্ধিত কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে শিল্পায়নের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সেবা খাতসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও যাতে দ্রুত বিকশিত হয়, তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে নিকট ভবিষ্যতে দেশে বিনিয়োগ আরও গতি পাবে, সেইসঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থানের হারও।

লেখক: রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উপদেষ্টা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

ফ্যান চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

রামপুরায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আগুন

ওএসবি চক্ষু হাসপাতালে কাজের সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

গাজায় নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুমোদন করল জাতিসংঘ

সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ভাঙচুর

ঢাকায় শীতের আমেজ, তাপমাত্রা নামল ১৮ ডিগ্রিতে

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

স্থানীয় সরকার বিভাগে বড় নিয়োগ, আবেদন যেভাবে

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১০

১৮ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১১

মোবাইলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখবেন যেভাবে

১২

মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন যুবরাজের বাবা!

১৩

রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ

১৪

থানায় ককটেল নিক্ষেপ, ৩ পুলিশ আহত

১৫

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে মধ্যরাতে হামজার পোস্ট

১৬

‘আই ডোন্ট কেয়ার’ লেখা ফটোকার্ড পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে থানায় সোপর্দ

১৭

ইতালিতে শীতকালীন পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

১৮

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ভুক্তভোগীদের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’: জাতিসংঘ

১৯

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত যে ৩২ দলের

২০
X