শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
মোহন রায়হান
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হৃদয় জাদুকরের অপেক্ষায়

হৃদয় জাদুকরের অপেক্ষায়

১৬ বছর আগের কথা। ২০০৮ সালে কলকাতা বাইপাস অ্যাপোলো হসপিটালে এক্সিকিউটিভ হেলথ চেকআপ করাতে গিয়ে আমার হার্টের ব্লক ধরা পড়ে। পরদিনই বাইপাস অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু অ্যাপোলোর বুক স্টলে পাওয়া ডা. বিমল ছাজেড়ের ‘হৃদরোগ থেকে মুক্তির সহজ ৫টি পদক্ষেপ’ বইটি আমার জীবন বদলে দেয়।

আমি অপারেশন না করে সাওল চিকিৎসায় ১৬ বছর হৃদরোগমুক্ত সুস্থ জীবনযাপন করছি। অথচ আমার বাবা, চাচা, বড় ভাই, শ্বশুর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আমার বড় ভাইকে উপমহাদেশের কিংবদন্তি হার্ট সার্জন দেবী শেঠি অপারেশন করেছিলেন কিন্তু অপারেশনের দুই বছর পর তিনি মারা যান।

একজন হৃদরোগ সারভাইভার হিসেবে নিজে সুস্থ হয়ে দেশবাসীকে বিনা রিং, বিনা অপারেশনে হৃদরোগ থেকে মুক্ত রাখার স্বপ্ন এবং অঙ্গীকারে ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি নিজের জমি বিক্রি করে ২৬ ইস্কাটন গার্ডেন রোড, ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছি সাওল হার্ট সেন্টার। বাংলাদেশে বিনা রিং, বিনা অপারেশনে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ সাওল হার্ট সেন্টার।

বিনা রিং, বিনা অপারেশন কথাটা শুনলে হয়তো মনে হতে পারে, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা কিংবা ঝাড়ফুঁক কবিরাজি কি না। না, সাওল পিওর মডার্ন মেডিকেল সায়েন্স। সর্বাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। আধুনিক মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের পর্যায় নির্ণয়, বুক না কেটে নতুন প্রযুক্তির ইইসিপি মেশিনের মাধ্যমে বাইপাস অপারেশন, কার্ডিও ডিটক্স চিকিৎসার মাধ্যমে হার্টের ব্লক গলিয়ে দেওয়া, সঠিক ওষুধ প্রয়োগ, হাঁটাচলা, শারীরিক পরিশ্রম, ইয়োগা-মেডিটেশন, ফুডহ্যাবিট, লাইফস্টাইল চেঞ্জ—সবকিছুর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্থায়ী আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

এ চিকিৎসায় মানুষের শরীরে খোঁচাখুঁচি, কাটাছেঁড়া করতে হয় না, ঘটাতে হয় না কোনো রক্তপাত। সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত, ব্যথা-বেদনাহীন আনন্দময় নতুন ধারার অপূর্ব চিকিৎসার নাম—সাওল (Science And Art Of Living-SAAOL).

যারা হৃদরোগে আক্রান্ত কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যারা রিং পরিয়ে, অপারেশন করিয়েও আবার কষ্ট পাচ্ছেন, ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার মেন্টালট্রেসে ভুগছেন, তাদের সাওল পদ্ধতিতে নিশ্চিতভাবে সুস্থ করা সম্ভব। এ কোনো কথার কথা নয়, রূপকথার গল্প নয়। বাস্তব সত্য। ডকুমেন্টাল। বড় বড় হসপিটাল যেখানে বলেছে, আগামীকাল অপারেশন না করলে রোগী যে কোনো সময় মারা যেতে পারে। আমিসহ এরকম কয়েক লাখ মানুষ সাওল চিকিৎসায় সুস্থ আছে, ভালো আছে।

সাওল হার্ট সেন্টারের এরকম সফলতার মূল, যে ১৫টি কারণে হৃদরোগ হয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করালেও, কোটি টাকা দামের রিং পরালেও হার্টের ব্লক বারবার হবে। সাওল সেই ১৫টি কারণ সরানোর চিকিৎসা করে। যে কারণে যে রোগ হয় সেই কারণ সরিয়ে নিলে সেই রোগ আর থাকে না। আর আমাদের অধিকাংশ রোগের কারণ লাইফস্টাইল ও ফুডহ্যাবিট। সাওলের বড় কৃতিত্ব লাগাতারভাবে চেষ্টা করে মানুষের ফুডহ্যাবিট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করিয়ে দেওয়া। শুধু হার্ট নয়, ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, ওভার ওয়েটসহ যেসব কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, সেগুলোকে দূর করে দেয়।

সাওল হার্ট সেন্টারের বর্তমানে পৃথিবীতে ১৩৪ শাখা রয়েছে। সাওলের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিমল ছাজেড় একটি কথা বলেন, ‘অন্য ডাক্তাররা দেয় প্রেসক্রিপশন আর আমি দিই নলেজ।’ হ্যাঁ, সত্যি তিনি বিরামহীন পরিশ্রম করে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য বড় বড় সেমিনার কিংবা কর্মশালা আয়োজন করেন—হৃদরোগের কারণ কী? কীভাবে হৃদরোগ দূর করা যাবে? কী করলে হৃদরোগের সহযোগী ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, মেন্ট্রালট্রেসসহ অন্য রোগগুলো সরিয়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকেন। অর্থাৎ ডা. ছাজেড় রোগীকে চিকিৎসাই শুধু দেন না, রোগ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত করেন। একেকজন রোগী আর তার পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের প্রায় ডাক্তারে পরিণত করেন। নিজের চিকিৎসা নিজেকেই করাতে শেখান। সেখানেই ডা. ছাজেড়ের কৃতিত্ব, মহত্ত্ব ও সফলতা। সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ ডা. ছাজেড়ের সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে শনিবার, সকাল ১১টায় সাওল হার্ট সেন্টারের ‘কাজল মিলনায়তনে’ আয়োজন করে ‘সাপ্তাহিক ফ্রি সাওল হার্ট এবং লাইফস্টাইল সেমিনার’। গত ১৮ মে, যার ৪০৩তম সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো। সারা দেশে জেলা-উপজেলায় ৭৮টি এবং জাতীয়ভাবে ডা. ছাজেড়কে নিয়ে এ পর্যন্ত ১৮টি সেমিনারের আয়োজন করেছে সাওল। জাতীয় সেমিনারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেত কিন্তু করোনার কারণে ২০১৯-এর পর ডা. ছাজেড় আর বাংলাদেশে আসেননি। চার বছর পর তিনি আবার বাংলাদেশে আসছেন।

আমাদের কাঙ্ক্ষিত দিনের আর মাত্র দুদিন বাকি আছে! চার বছর পর ডা. বিমল ছাজেড় ঢাকায় আসছেন ৩১ মে, ১৯তম ‘জাতীয় সাওল হার্ট এবং লাইফস্টাইল সেমিনারে’ যোগ দিতে। আমরা যারা ‘হৃদরোগ প্রতিরোধ প্রতিকার’ সম্পর্কে তার বক্তব্য শুনেছি, সুস্থ থাকতে ভালোবাসি তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আবার কখন তার কথা শুনব।

কীভাবে বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক হৃদরোগ থেকে মানুষ মুক্তি পেতে পারে আর হৃদরোগের সহযোগী ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, মানসিক চাপ এবং অন্যান্য আরও কারণ দূর করে বাকি জীবন সুস্থ সুন্দরভাবে কাটাতে পারে, এ বিষয়ে সহজ সরল বাংলা ভাষায়, কী নিপুণ সাবলীল পুঙ্খানুপুঙ্খ কী আশ্চর্য উপস্থাপনায় তিনি তুলে ধরেন, তা না শুনলে অনুমান করা যাবে না।

অতি সাধারণ মানুষের পক্ষেও মেডিকেল সায়েন্সের জটিল কঠিন বিষয়গুলো বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। ডা. ছাজেড়ের বক্তব্য শুধু যে রোগ মুক্তি বা সুস্থ জীবনের আলাপন তাই নয়, অত্যন্ত আনন্দদায়ক উপভোগ্য তার উপস্থাপনা! কী অদ্ভুত হৃদয়গ্রাহী তার প্রতিটি কথা! প্রতিটি উচ্চারণ! মনে হয় যেন সিনেমা হলে বসে পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বিশ্বের সেরা একজন অভিনয়শিল্পীর মানুষের জীবন নিংড়ানো সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার অতুলনীয় ভাষণ উপভোগ করছি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ২০১০ সালে দ্বিতীয় সাওল হার্ট ক্যাম্পে তার বক্তব্য শুনে বলেছিলেন, ওহে, ‘এ তো কথার জাদুকর!’

সাওল সেমিনারে পরপর তিনবার অংশগ্রহণ করা একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি প্রতিবার কেন রেজিস্ট্রেশনের টাকা খরচ করে এ সেমিনারে যোগ দেন? তিনি আমাকে বলছিলেন, ‘আমি তিনটা দিন ভালো থাকি বাবা (আগে সেমিনার তিন দিন হতো)।’

মঞ্চে ডা. ছাজেড় একাই দিনব্যাপী মানুষের জীবন এবং সুস্থতা নিয়ে কথা বলেন কিন্তু এতটুকু বোরিং লাগে না কারও, বরং আরও বেশি শুনতে ইচ্ছে করে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলেও মন সায় দেয় না। মনে হয়, যদি পরের কথাটা মিস করি? স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অথচ অত্যন্ত আনন্দময় উপভোগ্য এ সেমিনারে অংশগ্রহণ না করলে সেটা বোঝা যাবে না। আমি দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানাই, একবার ডা. ছাজেড়ের এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করে দেখুন, আপনার জীবন বদলে যাবে।

১৯তম জাতীয় সাওল সেমিনারের প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করবেন ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান এমপি, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খোরশেদ আলম, হোপ অ্যান্ড হেলথ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী। সাওলের এ সেমিনারে যোগ দিতে তিনবেলা খাবার, সেমিনারের পর ১৫ দিনের মধ্যে সাওলের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে একবার ফ্রি দেখানোর সুযোগ, সেমিনারের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহসহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২ হাজার ১০০ টাকা। যে কেউ এ গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে অংশ নিয়ে আশাতীতভাবে হার্ট, ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, অতি ওজনসহ শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ অনেক রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় খুঁজে পেয়ে বাকি জীবন সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।

লেখক: কবি এবং সাওল হার্ট সেন্টার (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১০

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

১১

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

১২

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১৩

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৪

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১৫

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৬

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৭

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৮

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১৯

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

২০
X