রাজধানীর বংশালের আগা সাদেক রোডে হরিজন সম্প্রদায়ের বসতি মিরনজিল্লা কলোনির বাসিন্দারা বেশ কিছুদিন ধরেই রয়েছে উচ্ছেদ আতঙ্কে। গত সোমবার উচ্ছেদ অভিযানে ৮০টি ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। উচ্ছেদ হওয়া এসব মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাকি জায়গা খালি করার কথা বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার প্রায় ৫০০ পরিবার এক ভয়ানক অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার
মধ্যে পড়েছে। গণতান্ত্রিক একটি দেশে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গেই এমন অমানবিক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার কালবেলায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, উচ্ছেদ আতঙ্কে এরই মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন একজন। এতকিছুর পরও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কলোনি ছেড়ে যেতে নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে। এ ছাড়া ৪০০ বছরের পুরোনো এ কলোনিতে কেটে দেওয়া হয়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় চার হাজার মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। কলোনি উচ্ছেদ নিয়ে বুধবার রাতেও ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদলের অনলাইন বৈঠক হয়। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে কলোনির বাসিন্দারা। তারা বলছে, স্থানীয় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগিতায় তাদের পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও গত ৩ ও ৪ জুন বস্তি উচ্ছেদে চার প্লাটুন পুলিশ চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রথম চিঠি দেওয়া হয় সিটি করপোরেশন থেকে। এর প্রতিবাদে হরিজনরা বিক্ষোভ করলে মেয়র তাদের উচ্ছেদ না করার আশ্বাসও দেন। এরপরও গত রোববার আবারও বস্তি খালি করতে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। গত সোমবার চালানো হয় অভিযান। মঙ্গলবার দিনভর হাজারো মানুষের প্রতিবাদের মুখে প্রস্তুতি নিয়েও অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এ হিসেবে আজ শুক্রবার রাত অথবা আগামীকাল শনিবার আবারও উচ্ছেদ অভিযান হতে পারে—এমন শঙ্কা কলোনিবাসীর সবার মনে। তারা বলছে, অভিযান হলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কী করবে? শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে শুধু একটিই কথা—আমরা কোথায় যাব? আমাদের কী হবে? সিটি করপোরেশন বলছে, এখানে বসবাস করা পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ৬৬ জনকে পুনর্বাসন করা হবে। কারণ একজন বর্তমানে করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত।
এসব পরিবারের সদস্যরা কোনো না কোনো সময় সিটি করপোরেশনেরই কর্মী ছিল এবং তাদের সবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এ কলোনিই, তাহলে পুনর্বাসনের প্রশ্নইবা কেন? উচ্ছেদের বিষয়টি গত বুধবার জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক বিবেচনা ও সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা জানি, যুগ যুগ ধরে অধিকারবঞ্চিত মানুষের বঞ্চনার ঠিকানা এ কলোনি। যেখানে প্রতি পরতে পরতে এমনিতেই রয়েছে মৌলিক অধিকার হারানোর হাজারো হৃদয়বিদারক গল্প। তার ওপর যদি বাস্তুহারা হতে হয়, তা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেশের জন্যও লজ্জার। আমরা মনে করি, এই উচ্ছেদের যে কোনো প্রয়াস মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কোনো বিবেচনাতেই এ হেন অমানবিক কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সুবিবেচনা ও মানবিকতার পরিচয় দেবে।