কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০২:০৩ এএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

সরদার ফজলুল করিম

মৃত্যুবার্ষিকী
সরদার ফজলুল করিম

অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম বাঙালি লেখক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ। তিনি ১৯২৫ সালের ১ মে বরিশালের প্রত্যন্ত আটিপাড়া গ্রামের গরিব এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের অন্যসব চিন্তা বাদ দিয়ে দিন শুরু হতো খাবারের চিন্তায়। প্রতিদিন বাবাকে ফসলের মাঠে সাহায্য করতে লাঙল নিয়ে ছুটতে হতো তাকে। তিনিই লিখেছিলেন, ‘কৃষকের সন্তানের কোনো ভবিষ্যৎ নেই!’ কিন্তু তার নিজের ক্ষেত্রেই তিনি তা ভুল প্রমাণ করেছিলেন। সেখান থেকে উঠে এসে তিনি হয়েছিলেন কালের মনীষী, প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক, দার্শনিক। তিনি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, হয়েছিলেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য। বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন। মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী। সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল গ্রামেই কেটেছে। ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করে তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সালে তিনি তার আইএ পাঠ সমাপ্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সালে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৪৬ থেকে ’৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করেন। তার সাম্যবাদী বামপন্থি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার একপর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে সুদীর্ঘ ১১ বছর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাযাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে তাকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অফিস থেকে ধরে নিয়ে বন্দি করে। চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা এসে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের দরজা খুলে দিলে অন্যসব কয়েদির সঙ্গে তিনিও মুক্তি পান। পরবর্তীকালে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। সরদার ফজলুল করিম বেশ কিছু ধ্রুপদী গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিকস, রুশোর সোশ্যাল কনট্রাক্ট। এ ছাড়া দর্শনপাঠে আগ্রহীদের জন্য ‘দর্শনকোষ’ নামে একটি অনবদ্য বই লিখেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সরদার ফজলুল করিম আগামী প্রজন্মের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করার আহ্বান ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তার দর্শনের মধ্য দিয়ে। নিজের জীবনেও সেই উপদেশ সত্য প্রমাণ করে গেছেন তিনি। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের শক্ত ঝান্ডা ধরেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও সার্থক জ্ঞানতাপস। তার নানাবিধ কর্মের মধ্যে জীবনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে দেখিয়েছেন এবং চেষ্টা করেছেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাম্যের সমাজ গড়ে তোলার বীজমন্ত্র প্রোথিত করতে। ২০১৪ সালে ১৫ জুন মারা যান এই জ্ঞানতাপস।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১০

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১১

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১২

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৩

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৪

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

১৫

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

১৬

থানায় জিডি করলেন সালাউদ্দিন টুকু

১৭

সংস্কৃতির ভেতরেই রাজনীতির সৃজনশীলতা নিহিত : দুদু

১৮

সাইফের চোখ বাঁচাতে প্রয়োজন ৩০ লাখ টাকা

১৯

সিরিজ জিততে বাংলাদেশের দরকার ১৪৮ রান

২০
X