বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে শুরু, পরবর্তী সময়ে তারিক কাজী, সৈয়দ কাজেম শাহ কিরমানি ও হামজা চৌধুরী জাতীয় দলে অভিষিক্ত হয়েছেন। সামিত সোম ও ফাহমিদুল ইসলাম অভিষেকের প্রতীক্ষায় আছেন। কিউবা মিশেলের বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। প্রবাসী ফুটবলারদের এ মিছিল দেশের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক—এ নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন কোচের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এ নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের প্রতিবেদন
মোহাম্মদ আবু ইউসুফ
আমাদের বর্তমান ফুটবল কার্যক্রমে ফলাফলটাই মুখ্য। দুঃখজনকভাবে দেশের ফুটবলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নতির বিষয়টা গৌণ হয়ে গেছে। বংশোদ্ভূত ফুটবলার দিয়ে তাৎক্ষণিক সাফল্য হয়তো পাওয়া যাবে; কিন্তু এ সাফল্যের পর কর্মকর্তারা কৃতিত্ব নেবেন। পরবর্তী সময়ে যারা আসবেন, তাদের মধ্যেও শর্টকাট সাফল্যের প্রবণতা কাজ করবে। এভাবে দেশের ফুটবল আরও পিছিয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছি। বংশোদ্ভূত ফুটবলার আনার সুফল তখনই পাওয়া যাবে, যখন স্থানীয়ভাবে ভালোমানের ফুটবলার তৈরি হবে। আমার মতে, বংশোদ্ভূত ফুটবলার খেলানোর পাশাপাশি দৃষ্টি দেওয়া হোক স্থানীয় প্রতিভার পরিচর্যায়।
হাসানুজ্জামান খান বাবলু
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার নিয়ে আসার ফর্মুলা হয়তো আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি জয় এনে দেবে; কিন্তু দেখতে হবে—তার পরের ধাপে কী আছে? প্রবাসী ফুটবলারদের মাধ্যমে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে উন্নতির সুযোগ আমি দেখছি না। প্রবাসীদের খেলানোর পাশাপাশি আমাদের প্রতিভার পরিচর্যায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তখন দেখা যাবে, প্রবাসী ফুটবলারদের সঙ্গে লড়াই করার মতো অবস্থা তৈরি হবে, যা দেশের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক হবে। প্রতিভাবানদের পরিচর্যার জন্য ২০-৩০ বছরের পরিকল্পনা সাজাতে হবে, ঢেলে সাজাতে হবে অবকাঠামো। ফুটবলবিশ্বে উন্নতি করা দেশগুলো কিন্তু এ ফর্মুলাতেই চলছে।
শফিকুল ইসলাম মানিক
প্রবাসী ফুটবলারদের বিষয়টাকে আমি অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখছি। নিকট অতীতে দেখা গেছে, এক-দুই ম্যাচ ভালো খেলেই জাতীয় দলে এসেছেন অনেক ফুটবলার। আবার হারিয়ে যেতেও সময় লাগেনি তাদের। প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলাররা আসায় জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কাজটা কিন্তু ক্রমেই কঠিন হচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে যারা জাতীয় দলে আসবেন, তাদের কিন্তু পরীক্ষা দিয়েই আসতে হবে। আমি স্থানীয় খেলোয়াড়দের কাছ থেকে প্রত্যাশা করব—তারা এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলুক, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে দলে সহজে সুযোগ না পায়। এতে আমাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু
অরিজিন প্লেয়ারদের নিয়ে বিশ্বের সব দেশেই আগ্রহ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের যে অরিজিনরা এসেছেন, তাদের ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই লক্ষ করা যাবে। কিন্তু ফুটবলে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য আপনাকে ঘরোয়া আসরগুলো ঢেলে সাজাতে হবে। ঘরোয়া লিগ যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে বৈশ্বিক আসরে গিয়ে কিন্তু কখনো তাল মেলাতে পারবে না আমাদের ফুটবলাররা। তাই অরিজিনদের সুফল নেওয়ার পাশাপাশি
আমাদের ফুটবলের অবকাঠামোসহ যাবতীয় বিষয়গুলো উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু খজনকভাবে আমাদের ঘরোয়া কার্যক্রম ক্রমেই নাজুক হচ্ছে। দেশের ফুটবলের জন্য যা ভালো লক্ষণ নয়।
মন্তব্য করুন