ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৫ এএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম আদালত

অসচেতনতা
মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম আদালত

বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত বা শিল্প কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সচেতনতা। আর এই সচেতনতা যদি শুধুই লোক দেখানো হয়! রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবনেই শোভা পাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। চট্টগ্রাম আদালতের মতো স্থাপনারই এমন অবস্থা।

চট্টগ্রাম আদালতে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি পরিস্থিতিতে ছোট আকারের আগুন নেভাতে বা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আদালত ভবনের দেয়ালে ঝোলানো রয়েছে। তবে এর সবই মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের গায়ে লাগানো উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের লেবেল ছেঁড়া।

সাধারণ মানুষের ভাষ্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন। এখানে হাজার হাজার মামলার নথি রয়েছে। আগুন লেগে যদি নথি পুড়ে যায়, তাহলে সবার কপালও পুড়বে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সজাগ ও সচেতন থাকা প্রয়োজন।

আদালতে আসা সাকি আল ফাহাদ নামে একজন বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার জানা ও বিষয়টি ভালো করে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোয় এ বিষয়ের গুরুত্ব আবার সামনে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ছাড়াও বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। ছোট পরিসরের আগুন নেভাতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন ভবন তৈরি করার সময় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান নকশার মধ্যে দেখাতে হয়। যারা এই যন্ত্রগুলো বসিয়েছেন, সেগুলোর মেয়াদের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মানুষকে দেখানোর জন্য দেয়ালে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন করল, আর তার মেয়াদ কখন যে শেষ হয়ে গেছে, তার খবর থাকল না—সেই কার্যক্রমের কোনো দরকার নেই। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। আদালতের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ। লোক দেখানো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন না করে, সেগুলোর মেয়াদের কী অবস্থা, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে ৬০ বছর আগের নথিপত্র ছিল। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ হাজার হাজার কাগজও সেখানে ছিল। আগুনে নথি, ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, ডিপিএসের কাগজপত্র, সমিতির সদস্যদের হিসাবের বই সব পুড়ে গেছে।

এর আগে ২০১৭ সালের ৫ জুন নতুন আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশে মহানগর আদালতের মালখানায় আগুন লাগে। মালখানায় আলামত হিসেবে রাখা মোবিল ও অকটেনের ছোট কৌটা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ ও কর্মচারীরা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আনুমানিক দুই শতাধিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো আছে। প্রতিটি কক্ষের পাশে দেয়ালে এই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষ থেকে শুরু করে মহানগর দায়রা জজ, জেলা দায়রা জজ, কোর্ট প্রসিকিউশন কক্ষ থেকে শুরু করে সব কক্ষের দেয়ালে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো আছে, যা আদালতে আগুন লাগলে তা নেভাতে সহায়ক হবে।

জেলা আইনজীবী মীর শফিকুল কবীর বিজন বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে আদালত ভবনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে আদালতে ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তখন অনেক নথি পুড়ে যায়। আগুন লাগার কোনো দিনক্ষণ, সময় থাকে না। যে কোনো মুহূর্তে আগুন লাগতে পারে। যেহেতু আদালত ভবন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন, এই ভবনের দেয়ালে বসানো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলোর মেয়াদ আছে কী নেই, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভবনের দেয়ালে রাখা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলো ছোট আগুন নেভাতে কার্যকরী। সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্রগুলো বসানো থাকে। তা ছাড়া বাসাবাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। নিজেদের নিরাপত্তার কারণে বসানো যন্ত্রগুলোর দিকে তাদেরই খেয়াল রাখতে হবে—অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলোর মেয়াদ আছে কি নেই।

চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের বিপরীতে আপনাদের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবন গণপূর্ত দেখাশোনা করে। আমাদের সেখানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে পরামর্শ চাইলে আমরা পরামর্শ দিই। নিরাপত্তার খাতিরে এই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলোর মেয়াদ আছে কী নেই, সে বিষয়ে অবশ্যই সজাগ ও সচেতন থাকা উচিত। আমাদের সচেতনতা কার্যক্রম প্রতি সপ্তাহে চলমান রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

থানায় জিডি করলেন সালাউদ্দিন টুকু

সংস্কৃতির ভেতরেই রাজনীতির সৃজনশীলতা নিহিত : দুদু

সাইফের চোখ বাঁচাতে প্রয়োজন ৩০ লাখ টাকা

সিরিজ জিততে বাংলাদেশের দরকার ১৪৮ রান

১০

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফর গণতন্ত্র ও মানবিক সংহতির বার্তা : প্রেস সচিব

১১

বিরক্ত মেহজাবীন চৌধুরী

১২

জামায়াত অন্তত ১৬০টি আসন পাবে : সাদ্দাম

১৩

‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

১৪

পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে খোয়াব পূরণ হবে না : জাগপা

১৫

‘আসল শিবির হইলো আমার মা, বাড়ি এলেই জোর করে বোরকা পরায়’

১৬

উৎসবের আবহে উদযাপিত হলো টাইমস স্কয়ার দুর্গা উৎসব

১৭

অবশেষে মুখ খুললেন আরিয়ান খান

১৮

৮-৯ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি নিয়ে কী বলছে মাউশি

১৯

গণভবন কখনোই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল না : উপ প্রেস সচিব

২০
X