

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাতায়াত বেড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের, যা মূলত ঋণখেলাপির তথ্য পরিবর্তন বা প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্কতা জারি করেছে এবং দেশের সব তপশিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে, যাতে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সঠিকভাবে হালনাগাদ ও যাচাই করা হয়। গত সপ্তাহে সিআইবি বিভাগের সঙ্গে ৪৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিআইবি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান। বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গ্রাহকের ঋণ তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ, সঠিকভাবে আপলোড এবং ভুল তথ্য পরিহার করতে। আজ সোমবার আরও ৪৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠকের কথা রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি থাকেন, তবে তিনি প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। আরপিওর আর্টিকেল ১২(১)(১) অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ঋণ বা কিস্তি পরিশোধ না করলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। অতীতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১ হাজার ৪০০ জনের সিআইবি রিপোর্ট অবৈধভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। এ কারণে সরকার বদলের পর সিআইবি বিভাগের তৎকালীন পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআইবির দায়িত্বকে আগের চেয়ে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচনের সময় প্রার্থী বা তাদের ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ঋণ তথ্য গোপন বা পরিবর্তন করার প্রবণতা রোধে ডাটাবেজ হালনাগাদ ও যাচাই প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে। বৈঠকে চারটি মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ঋণগ্রহীতাদের তথ্য সঠিকভাবে আপলোড করতে পারছে কি না। দ্বিতীয়ত, ব্যবহৃত সিআইএস সফটওয়্যার আরও দ্রুত, সহজ ও আধুনিক করার প্রয়োজন আছে কি না। তৃতীয়ত, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঋণ তথ্য হালনাগাদ ও সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কি না, তা যাচাই। চতুর্থত, নির্বাচনের আগে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত সংগ্রহ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঋণ তথ্যের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল বা গাফিলতি বরদাশত করা হবে না। সঠিক তথ্য আপলোড না করলে বা ভুল তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং চাকরিচ্যুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থীদের ঋণ তথ্য সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীর আর্থিক স্বচ্ছতা বা অসচ্ছতা অনেকাংশে নির্ভর করে তার ব্যাংকিং আচরণের ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও আপলোডকারীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে সিস্টেমের ত্রুটি শনাক্ত এবং নির্বাচনের আগে সব তথ্য হালনাগাদ নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাই, নির্বাচন হোক স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও নৈতিক। অর্থনৈতিকভাবে দায়মুক্ত, সৎ মানুষরাই যেন প্রার্থী হতে পারেন—এটাই আমাদের লক্ষ্য। নির্বাচনের সময় খেলাপি বা ঋণ বিভ্রাট সংক্রান্ত কোনো তথ্য গোপন না রাখতে ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন।’
মন্তব্য করুন