ক্যান্সারের রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়েনি সরকারি সুবিধা। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী নেই। যন্ত্রপাতিও বিকল সিংহভাগ। জরুরি ভিত্তিতে পাওয়া যায় না রেডিওথেরাপির সিরিয়াল। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে অপেক্ষা করতে হয় ৬ থেকে ৭ মাস। দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার পালিত হবে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ২০০০ সালে প্যারিসে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) এমন একটি সংস্থা, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে প্রথম এই দিবস পালন শুরু করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘আসুন, ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে একটি সচেতনতামূলক র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এ ছাড়া দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্যান্সার সচেতনতায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি জানায়, বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার শুরু স্বাধীনতার আগে। ১৯৫৮ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথম রেডিওথেরাপি যন্ত্র বসানো হয় টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে। এর পরপরই ১৯৫৮-৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় রেডিওথেরাপি সেবা। এদিকে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কোনো ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নেই। বছরে সারা দেশে কত রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মারা গেছে—এমন হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে গ্লোবাল ক্যান্সার ইনসিডেন্স, মর্টালিটি অ্যান্ড প্রিভিলেন্স (গ্লোবোক্যান) পরিসংখ্যানের আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) সর্বশেষ হিসাবে জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত ২ লাখ ৭১ হাজারের কাছাকাছি।
এর মধ্যে ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ক্যান্সার রোগীর। গড়ে প্রতিদিন ২৭০ জনের বেশি মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। সারা দেশে যেখানে প্রায় ১৮ লাখ ক্যান্সার রোগী আছে, সেখানে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানসহ মাত্র ১০টি হাসপাতালে। এই ১০টি হাসপাতালের মধ্যে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নেই। ফলে এই হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে থাকেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারা বেসরকারি হাসপাতাল ও দেশের বাইরে চিকিৎসা করালেও বাকিদের ভরসা শুধু এই ক্যান্সার হাসপাতাল। অথচ বিপুলসংখ্যক অসহায় রোগীর কথা চিন্তা করে সরকার প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার ইউনিট করার কাজ চলমান থাকলেও তা চলছে ঠিলেঠালাভাবে।