প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে চলতি বছরের ৩০ জুন। দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খুলনার ভৈরব সেতুর কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। দীর্ঘ এই সময়ে মাত্র ১৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সেতুর দুই পাড়ের মানুষজন। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অজুহাত দেখিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে নতুন সুর সড়ক ও জনপথের (সওজ)। এখন নকশা পরিবর্তন করে কনক্রিটের পরিবর্তে আর্চ স্টিলের সেতু বানাতে চায় তারা। ৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্পে আর শতকোটি টাকা বাড়ানোর আবদার সওজের। সব জটিলতা নিরসন করে আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছে সওজ অধিদপ্তর।
সওজ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভৈরব নদের দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর একনেকে পাস হয়। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু-সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় হবে। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করে সওজ। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ছয় মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে আরও দেড় বছর। সেইসঙ্গে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ওই মেয়াদ অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এত বছরে দিঘলিয়া প্রান্তে ৯টি খুঁটি (পিয়ার) আর শহর প্রান্তে দুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ। এ অবস্থায় তৃতীয় দফায় আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর
প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফার
সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কারণ যেভাবে কাজ চলছে, তাতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক এসএম নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সেতুটির কাজ শুরু করতে দেরিতে হয়েছে আমাদের। জমি বুঝে পেতেও সময় লেগেছে। শহর প্রান্তের জমি বুঝে পাইনি এখনো। ফলে স্বাভাবিক গতিতে কাজ করতে পারছি না। আগামী ৩০ জুন দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে। তাই নতুন করে দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলে এই সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’
এদিকে কাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পর ভৈরব সেতুর নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চায় সওজ। নতুন প্রস্তাবে মূল সেতু কংক্রিটের পরিবর্তে হবে আর্চ স্টিলের। সেতুর দুই পাশে স্বল্পগতির যানবাহন এবং হাঁটার জন্য পৃথক লেন থাকবে। এতে সেতুর প্রশস্ততা বাড়বে আরও ৯ ফুট। নতুন নকশায় সেতু দেখতে হবে কালনা সেতু ও হাতিরঝিলের মতো। এরই মধ্যে সংশোধিত নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে সড়ক বিভাগ। চলতি মাসেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সড়ক বিভাগ খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, ‘নতুন নকশায় প্রশ্বস্ততা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হবে। রূপসা সেতুর মতো দুই পাশে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন থাকবে। ওজন কম এবং নদীর ভেতরে পিলারের প্রয়োজন না হওয়ায় আর্চ স্টিল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় সামান্য বাড়বে।’ তবে নকশা পরিবর্তনের জন্য কাজের গতিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।