সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে লিভার ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের একদল গবেষক। এই পরীক্ষা সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করতে সক্ষম বলে আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর হলিডে ইন হোটেলে ‘সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। এইচকেজি এপিথেরাপিউটিকস, আইসিডিডিআর,বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী সম্মিলিতভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। এটি পিয়ার রিভিউ ও আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
সেমিনারে বলা হয়, সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করতে সক্ষম। এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে লিভারের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারীসহ ঝুঁকিতে আছেন—এমন ব্যক্তিদের লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ফলে এ ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এইচকেজি এপিথেরাপিউটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং কানাডার রয়্যাল সোসাইটির ফেলো অধ্যাপক মোশে জিফ। তিনি বলেন, লিভার ক্যান্সারের ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। ফলে এই রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, যা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। উদ্ভাবিত এই পরীক্ষা আধুনিক সিকোয়েন্সিং ও মাল্টিপ্লেক্সিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সাধারণ টিস্যু, রক্তের অন্যান্য নমুনা এবং নন-লিভার ক্যান্সার টিউমার থেকে লিভার ক্যান্সার নমুনাকে আলাদা করে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৫৫৪ জন অংশগ্রহণকারীকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষাটির মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন লিভার ক্যান্সার রোগী, নন-লিভার ক্যান্সার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে পরীক্ষাটিতে লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সেন্সিটিভিটি ও ৯৫ শতাংশ স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকের সেমিনারটি লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণে একটি মাইলফলক। এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনন্য অগ্রগতিকে তুলে ধরেছে। আমরা সবাই এখানে লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একত্রিত হয়েছি। বিশেষ ডিএনএ চিহ্নিতকারীর ওপর ভিত্তি করে এই নতুন পরীক্ষা ঝুঁকিতে আছে—এমন মানুষদের সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি ক্যান্সারের প্রভাব কমিয়ে আনবে বলে আশা করছি।
বিএসএমএমইউর ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান এবং এই গবেষণার অন্যতম গবেষক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবুও লিভার ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের এই অগ্রগতি একটি বিরাট পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সঙ্গে এটি লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর রোগের প্রভাবকে অনেকাংশে কমিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
মন্তব্য করুন