

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ শুরুর আর আট মাসও বাকি নেই। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জারি করা কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকাপকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। একাধিক দেশের দল ও সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সংস্থা কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ১৯টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা বা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। এর মধ্যে ১২টি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে—অর্থাৎ কোনো পরিস্থিতিতেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এই সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হলো—আফগানিস্তান, ইরান, সোমালিয়া, লিবিয়া, হাইতি, চাদ, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, মিয়ানমার, ইরিত্রিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইরান ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, যদিও তাদের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। তবে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন গ্রুপ ড্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছিল।
এ ছাড়া আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ভেনেজুয়েলা, কিউবা, বুরুন্ডি, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো ও তুর্কমেনিস্তান। এসব দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরি ও ভ্রমণের ধরনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে ব্রাজিল আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞায় না থাকলেও, ব্রাজিলীয় নাগরিকদের ভিসা ইস্যুতে সাম্প্রতিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বকাপ চলাকালে ব্রাজিলের সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সীমিত হতে পারে। এমনকি ভিসার মেয়াদও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশ্বকাপ টাস্কফোর্সের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু জিউলিয়ানি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশগুলোর সমর্থকদের জন্য বিশ্বকাপ উপলক্ষে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে না। তবে খেলোয়াড়, কোচ ও প্রয়োজনীয় সহায়ক স্টাফদের ভিসা দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
জিউলিয়ানি আরও বলেন, ভিসা ইস্যু একটি জাতীয় নিরাপত্তাজনিত বিষয়, প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে যাচাই করা হয়। তার মন্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে—অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও বিশ্বকাপ সময়কালে কঠোর অবস্থানে থাকতে পারে প্রশাসন।
এ অবস্থায় বিশ্বকাপ আয়োজন ঘিরে ফিফার ‘বিশ্বকে স্বাগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্র’—এই আশ্বাস বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দেশের সমর্থকরা মাঠে গিয়ে নিজ দলের খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও দেশ যুক্ত হতে পারে। মোট সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে—যা ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
মন্তব্য করুন