পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে চলে গেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে বিজিএমইএসহ বড় বড় সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আর আগের মতো জনসমক্ষে এবং সংগঠনে দেখা যাচ্ছে না। এফবিসিসিআইয়ে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনে সরকার সমর্থক বা সরকারের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সরকার পতনের পর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ আত্মগোপনে, কেউবা পালিয়ে গেছেন বিদেশে। যদিও কিছু ব্যবসায়ী এখনো জনসমক্ষে কথা বলছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিলেকশন পদ্ধতিতে এফবিসিসিআইর নেতা নির্বাচন করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক বা সরকারঘেঁষা ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের সভাপতিসহ শীর্ষ পদে রাখা হতো। সর্বশেষ এফবিসিসিআইর সভাপতি হন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একই সঙ্গে সরকারপ্রধানের সব ধরনের পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তিনি আর এফবিসিসিআইয়ে আসছেন না। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে আছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি শমী কায়সারকে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। আরও অনেক আওয়ামী লীগঘেঁষা পরিচালকও আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম কালবেলাকে বলেন, আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে আছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে একাত্মতার বিষয়ে বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সরকারে থাকেন। সামনে যে সরকার আসবে, ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে কাজ করবেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এসএম মান্নান কচিকে আর জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বিজিএমইএর সভাপতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকও।
আত্মগোপনে রয়েছেন আরেক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী নেতা বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সালাম মুর্শেদী। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ছিলেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক দুবারের সাবেক সভাপতি সামসুল আলামিন কাজল বর্তমানে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। বর্তমান সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামানকেও জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া আত্মগোপনে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। ডিসিসিআইর সভাপতি আশরাফ আহমেদ বর্তমানে সংগঠনটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভিয়েতনাম সফরে রয়েছেন। বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমানকে সামনে দেখা না গেলেও ব্যবসা নিয়ে সরব নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তবে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জনসমক্ষে না এলেও কালবেলাকে বলেন, যা হয়েছে ভালো হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চান না তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট অনেক ব্যবসায়ী নেতা আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।