আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন মেয়র হিসেবে তিনি শপথ নেবেন কি না বা শপথ নিলে কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন—তা নিয়ে চলছে আলোচনা। শপথসহ সার্বিক বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না আসায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাস্তবায়ন করতেই ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আদালতের আদেশের যেন ব্যত্যয় না ঘটে, তাই সেটা (গেজেট প্রকাশ) বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বাধ্যবাধকতা ছিল ১০ দিনের মধ্যে এটার নিষ্পত্তি করার, আমরা নিষ্পত্তি করেছি।
ইশরাকের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় মেয়র হিসেবে শপথ আয়োজনের বিষয়টি দেখভাল করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেক্ষেত্রে তিনি কত মাসের জন্য দায়িত্ব পাচ্ছেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শপথ পর্যন্ত।
অন্যদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়া ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তার নামে গেজেট প্রকাশ এবং শপথ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে গত রোববার নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান আইন অনুযায়ী এই সিটি করপোরেশনের মেয়াদ আছে আর ১৫ থেকে ১৬ দিন। সেই অনুযায়ী যদি নতুন করে তপশিল ঘোষণা করা হয়, সেখানে যদি ইশরাক হোসেন প্রার্থী হতে চান, তাহলে তাকে এ সময়ের মধ্যেই পদত্যাগ করে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে।’
যদি মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা না করা হয় তখন কী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বর্তমান আইনে এ বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে স্থানীয় সরকার কমিশন নতুন যে সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেখানে মেয়াদ শেষে ভোট না হলে প্রশাসক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।’ তবে এমন পরিস্থিতি এর আগে না ঘটায় শপথ নিলে ইশরাক হোসেন কতদিন পদে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে আইনগত জটিলতা রয়েই গেছে বলেও মনে করেন তোফায়েল আহমেদ।
জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমি মেয়র পদে শপথ নিলে কতদিন দায়িত্ব পালন করব, তা বলতে চাই না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে। শুধু বলব, আমি ন্যায়বিচার চাই। আমি মনে করি, আমি পাঁচ বছরের জন্যই নির্বাচিত হয়েছি।’
মন্তব্য করুন