রাজু দত্ত, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

লুটে নেওয়া হচ্ছে নদী ও ছড়ার সিলিকা বালু

মৌলভীবাজার
লুটে নেওয়া হচ্ছে নদী ও ছড়ার সিলিকা বালু

মৌলভীবাজারের সৌন্দর্যের অন্যতম সম্পদ নদী ও ছড়া। এই জেলায় ছড়ার সংখ্যা কয়েকশ; কিন্তু সম্প্রতি সিলিকা বালু লুটের কারণে এসব ছড়ার স্বাভাবিক রূপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। অভিযোগ রয়েছে, রাতের আঁধারে জেলার অর্ধশতাধিক ছড়া থেকে একটি প্রভাবশালী মহল নিয়মিত বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। অথচ তা প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় আছে।

সরকারি তথ্য বলছে, মৌলভীবাজারে সিলিকা বালুর কোয়ারি তালিকায় আছে ৫২টি ছড়া। এর মধ্যে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদিত কোয়ারি মাত্র ৩৩টি। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত ১৯টি ছড়ায় ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। পরে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) ও এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট

প্ল্যান (ইএমপি) সাপেক্ষে ৩৩টি ছড়ায় ইজারার অনুমোদন দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫০টি ছড়ায় সিলিকা বালুর কোয়ারির ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও মাত্র ছয়টি ইজারা দেওয়া হয়। এর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন জেলার অধিকাংশ ছড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।

জেলার বিভিন্ন ছড়ায় গেলে দেখা যায়, ছড়ার তীরে ছোট-বড় সিলিকা বালুর স্তূপ। স্থানীয়রা জানান, মূলত রাতেই কোদাল ও টুকরি দিয়ে বালু তোলা হয়। প্রতিদিনই বালু বিক্রি করে দেওয়া হয়, তাই বড় স্তূপ দেখা যায় না। যেসব এলাকায় লোকজনের আনাগোনা কম, সেখানে উত্তোলন কার্যক্রম বেশি চলে।

একজন গোপন বালু উত্তোলনকারী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা রাতে বালু উত্তোলন করি। এরপর ট্রাক, পিকআপ বা ট্রাক্টরে তা বিক্রি করে দিই। বৃষ্টি হলে আবার ছড়ায় নতুন বালু জমে যায়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সালেহ সোহেল বলেন, সরকারকেই সিলিকা বালু রক্ষা করতে হবে। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন করছেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে ভোলাগঞ্জের মতো পাথর লুট হওয়ার পর মায়াকান্না করে কোনো লাভ হবে না।

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলিকা বালু ইজারার বিষয়টি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ দেখে। আমাদের এখতিয়ারে নেই। যারা বালু তুলছে, তারা কার কাছ থেকে বৈধতা নিয়েছে, সে তথ্যও আমাদের জানা নেই।’

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আক্তার বলেন, ইজারা ছাড়া বালু তোলা অবৈধ। এটি ঠেকানো প্রশাসনের দায়িত্ব। যারা এভাবে সুযোগ দিচ্ছে, তারা আদালতের রায়কে অবমাননা করছেন।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোসা. শাহীনা আক্তার বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই, জরিমানা ও মামলা দিই। তবে অনেক সময় আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে এসব বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করা হয়।’

স্থানীয়দের দাবি, অবৈধ সিলিকা বালু উত্তোলন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ ও নিয়মিত নজরদারি জরুরি। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে মৌলভীবাজারের ছড়া ও প্রকৃতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিপিএলে বাড়তে পারে আরও এক দল, আলোচনায় নতুন নাম

‘১৭ বছর পর ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে এসেছে’

নিজের চেহারা নিয়ে যা বললেন ধানুশ

একসঙ্গে জন্ম নেওয়া পাঁচ শিশুকে গাভি উপহার

এক পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ পদে শিক্ষক নিয়োগ

হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

দেবের সঙ্গে রোম্যান্সে নজর কেড়েছেন জ্যোতির্ময়ী

আটটির মধ্যে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছি : ট্রাম্প

বরিশালের এক নেত্রীকে সুসংবাদ দিল বিএনপি

ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা, গণপিটুনিতে নিহত ১

১০

প্রসূতির মৃত্যু, পালিয়ে গেলেন চিকিৎসক-নার্স

১১

টাইপকাস্ট হতে চান না তৃপ্তি

১২

আয়ারল্যান্ড সিরিজ মিস করবেন তারকা ক্রিকেটার!

১৩

ফাতিমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজয়

১৪

পদ্মার চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

১৫

জেনে নিন আজকের স্বর্ণের বাজারদর

১৬

ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে নতুন অভিযানে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

১৭

কড়া নিরাপত্তায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির 

১৮

গুমের মামলায় সশরীরে নয়, ভার্চুয়াল হাজিরা চান গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তারা

১৯

পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০
X