কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নদনদীর পানি কমলেও চরাঞ্চলে দুর্ভোগ

এখন ভাঙন আতঙ্কে কুড়িগ্রামের হাজার হাজার পরিবার । ছবি : কালবেলা
এখন ভাঙন আতঙ্কে কুড়িগ্রামের হাজার হাজার পরিবার । ছবি : কালবেলা

উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বাড়তে থাকা নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও গতকাল শুক্রবার পুরো দিনই ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল। তবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। এখনো পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার ৯ উপজেলার নদনদীতে পানি কমলেও সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলের ঘরবাড়িগুলো পাঁচ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান করলেও শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, মুসারচর, সদরের পোড়ার

চরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান করছে।

ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না তারা। পাশাপাশি পরিবারগুলোর হাতে কোনো কাজ না থাকায় শুকনো খাবার এবং নলকূপ তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়েছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পাউবোর তথ্য মতে, কুড়িগ্রামের সবকটি নদনদীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় জেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সদরের ধরলার সেতু পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৮৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় পাউবো।

পাউবো কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। নগদ অর্থ ও শুকনো খাবারের মজুত রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : টানা বৃষ্টির পর অবশেষে স্বস্তি পেয়েছে সুনামগঞ্জবাসী। মেঘলা আকাশ ভেদ করে ৯ দিন পর দেখা মিলেছে রোদের। শুক্রবার পুরো দিনই ছিল রোদ্রকরোজ্জ্বল। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে কিছুক্ষণের জন্য রোদের দেখা পাওয়া গিয়েছিল।

এর আগে গত ১৪ জুন থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়ছিল জেলার বিভিন্ন নদীর পানি। শুক্রবারও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৪ পয়েন্টে নদীর পানি সামান্য কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া একটি পয়েন্টে কমেছে এবং অন্যটিতে অপরিবর্তিত রয়েছে। একমাত্র ছাতক পয়েন্টে গত ১৮ জুন থেকে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। তবে শুক্রবার ওই পয়েন্টে নতুন করে পানির উচ্চতা বাড়েনি। বৃহস্পতিবারের মতোই ৯.০৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল সুরমার পানি, যা বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপরে।

এদিকে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ০.০৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ০.৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে অর্থাৎ ৭.৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দিরাই উপজেলার পুরাতন সুরমা নদীর পানি ০.২০ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫.৮৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার ০.৬৭ সেন্টিমিটার নিচে। যাদুকাটা নদীর পানি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ০.১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬.৩২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার ১.৭৩ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এ ছাড়া জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর পানি ০.১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬.৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এবং তাহিরপুর উপজেলার পাটনাই নদীর পানি ০.২০ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬.০১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও জানিয়েছে, কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদনদীগুলোর পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে এই অঞ্চলের নদনদীর পানি সমতলে স্থিতিশীল থাকতে পারে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪.০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সেজন্য ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবারের মতোই ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে এবং অন্যান্য পয়েন্টে সামান্য কিছুটা বেড়েছে।

টাঙ্গাইল : যমুনায় ভাঙনের শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিনটি ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বন্যার পানি বাড়তে শুরু হলেই প্রতি বছরের মতো টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ভাঙনের শিকার হয়। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগও ফেলে।

সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো স্কুলের অর্ধেক ভেঙে গেছে। এতে নতুন ভবন ভাঙনের হুমকিতে। ফলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের কাছে বিষয়টি নজরে আনার জন্য লিখিত আবেদন দেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আখিরুল জানান, সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভূতের মোড় পর্যন্ত এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্কুলের অর্ধেক প্রায় নদীতে চলে গেছে।

সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, কয়েকদিন আগে ভাঙনে বিদ্যালয়ের টয়লেট ও স্কুল ভবনের এক কক্ষ যমুনার পেটে চলে গেছে। বিদ্যালয়ের সরঞ্জামগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য বেড়িবাঁধ ও জিওব্যাগ ফেলার দাবি জানান তিনি।

সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীদুল ইসলাম অপু জানান, সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীনের পথে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিকভাবে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্যও পরিকল্পনা আছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নাগরপুরে ভাঙন রোধে ৩০০ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ বর্ষায় স্থায়ীভাবে কোনো সমাধান করা যাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী জেলা যমুনা নদীর পশ্চিম পাড় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করার পরিকল্পনা আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অভিজ্ঞতা ছাড়াই অর্ধলাখের বেশি বেতনে চাকরির সুযোগ

ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিটের উচ্চতর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতা অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা

চ্যাটজিপিটির ভুল তথ্যে বিপাকে পড়লেন তরুণী

ইসলামী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ইউরোপ জাপান কোরিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে ‘সুখবর’ দিলেন আসিফ নজরুল

জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় বাড়ল

অসুস্থ মেয়ের জন্য ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন গাজার সাবেক খেলোয়াড়

দিল্লিতে মাথায় চুল গজানোর চেষ্টায় ঢাকার সাবেক পলাতক এমপি

কালিগঞ্জে হিন্দু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

১০

রাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মনোনয়ন বিতরণ ২৪ আগস্ট

১১

টয়লেটে বসে দীর্ঘ সময় কাটান? যে ভয়াবহ রোগের ঝুঁকির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

১২

শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি প্রকাশ করে স্মৃতিচারণ করলেন বাঁধন 

১৩

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মেহেরপুরে পৌরসভা ঘেরাও

১৪

বিশ্ব মশা দিবস / মশা দমনে সচেতনতাই আনবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা

১৫

কালীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

১৬

চার্টার্ড সেক্রেটারি : ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী এক পেশা 

১৭

সিজিএসের সংলাপে বক্তারা / রাজউক দুর্নীতিমুক্ত না হলে ঢাকা বাঁচবে না

১৮

যাদের নিয়ে উমামার প্যানেল ঘোষণা

১৯

বিয়ের পর স্বাস্থ্য ও ভুঁড়ি বাড়ে কেন? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

২০
X