উপজেলা প্রকৌশলীকে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে গ্রেপ্তারসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তির হুমকি দিয়ে চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমার বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার সকালে এ অভিযোগ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম।
গত রোববার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় চেকে সইয়ের পর মুচলেকা দিয়ে সেখান থেকে মুক্ত হন ভুক্তভোগী প্রকৌশলী।
এদিকে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলেও গেট বন্ধ থাকায় কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রকৌশলীসহ ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাংকের শাখা থেকে বের হওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করেন।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সকালে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, এডিপি প্রকল্পের প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। সেই টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও দুজনে যৌথ অ্যাকাউন্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেন, যেন পরে তারা কাজ করিয়ে টাকা দিতে পারেন। আমরা সরকারি চাকরি করি। যে কোনো সময় বদলি হয়ে যেতে পারি। তখন কাজ ছাড়াই টাকা বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমি বলেছি, যৌথ অ্যাকাউন্ট শুধু ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান নয়; পদাধিকার বলে উপজেলা প্রকৌশলীকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মেনে না নিয়ে রোববার বিকেলে আমাকে সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় দুই ঘণ্টা একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এ সময়ে ইউএনও আমাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে অপমান-অপদস্থ করান। আমিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। কাজ শেষ না হওয়ায় নিয়ম ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে তারা চেকে স্বাক্ষর করিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
তবে এ ঘটনায় ইউএনও নুসরাত ফাতিমা রোববার রাতে এবং সোমবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। রোববার রাতে তিনি বলেছিলেন, জুন ক্লোজিংয়ে যেন বিলগুলো দ্রুত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয়, সেজন্য আমি সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলাম।
আর সোমবার সকালে তিনি বলেন, রোববার উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দুজনের মাথাই গরম ছিল। আমি তাদের দুজনকে দুদিকে সরিয়ে দিয়েছি। গ্রেপ্তারের শব্দটি উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ সময় তিনি আরও বলেন, রোববার রাতে আমি, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছি। এখন কেন প্রকৌশলী আটকের কথা বলছেন?
এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল ভাইয়ের কাছে বার্তা ছিল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন।
এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে।
প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ইউএনওর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল দেওয়ার কথা ছিল অনেকটা কথার কথা।
মন্তব্য করুন