আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে নতুন দলগুলোর মধ্যে তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দল দুটি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। অবশ্য নতুন দল হিসেবে সংগঠনের আদর্শ প্রচার এবং মানুষের কাছে আরও ব্যাপক পরিসরে পৌঁছাতে তৃণমূল বিএনপি ভোটে যাওয়ার পক্ষে। তিনটি দলই এখন সংগঠন গোছানোয় মনোনিবেশ করেছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল নতুন নিবন্ধিত তিনটি রাজনৈতিক দল—বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি ও বিএসপি। এই তিনটি দল থেকে মোট ৩০১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ঘোষিত ও ‘হিডেন’ মিলিয়ে বিএনএমের ৮৩ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৭ এবং বিএসপির ৮১ জন প্রার্থী নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। এজন্য অবশ্য ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনে বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় রোজার ঈদের পর থেকে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনএম। দলটি মনে করে, উপজেলা নির্বাচনও সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মতোই হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনএমের মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এই প্রতিশ্রুতিতে তারা নির্বাচনে গিয়েছিলেন। ভোট সুষ্ঠু হলে ২০ থেকে ২৫ আসনে তাদের দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হতেন। কিন্তু ভোটে কারচুপি হয়েছে, ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়েছে, জাল ভোট দেওয়া হয়েছে, এটি বুঝতে পেরে তাদের অনেক প্রার্থী নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই ভোট বর্জন করেন। ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনএমের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ নৌকা কিংবা যে প্রতীকেই আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটিও জাতীয় নির্বাচনের মতো সেই ‘আমরা আমরাই’ হবে। অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে বিজয়ী হতে দেওয়া হবে না। সুতরাং এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মানে হয় না।
বিএনএমের এই মহাসচিব বলেন, আমরা এখন সারা দেশে সংগঠন গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা আমাদের লক্ষ্য। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষে আমরা আন্দোলন বা দল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করব এবং সে অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হব।
তৃণমূল বিএনপি প্রচারের অংশ হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে হলেও সংসদ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। দলটির অভিমত, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সমর্থন করে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার কালবেলাকে বলেন, আমাদের দল নতুন। আমরা তৃণমূল বিএনপিকে আরও আলোচনায় আনতে এবং ব্যাপক পরিসরে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। দলের নীতি-আদর্শও প্রচার করতে চাই। তাই আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেতে চাই। পাশাপাশি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কতটুকু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেটা বোঝা গেছে। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সমর্থন করে। তাই আমরা উপজেলা নির্বাচনে যাব কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ২৭ জানুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির মিটিং হবে। এরপর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেওয়া হবে। সব স্তরের নেতাদের মতামত সাপেক্ষে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এবং খুব চিন্তাভাবনা করে আমরা সামনের দিকে এগোব। তিনি বলেন, আমরা এখন সংগঠন গোছানোয় মনোনিবেশ করেছি। তৃণমূল বিএনপিকে আমরা একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।
জানতে চাইলে বিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, আমরা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করেছি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সভা। এরপর সধারণ সভা ডাকা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নির্বাচনের ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সুতরাং আমাদের দলের কার্যক্রম চলতে থাকবে। আমাদের লক্ষ্য সারা দেশে সংগঠনকে বিস্তৃত করা।