২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে গেল। এখনো পাঠ্যবই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই সব বই পেলেও মাধ্যমিকের বিশেষ করে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। ফলে বেশকিছু বিষয়ে এখনো পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি ওই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নে জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দাবি, সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে সব বই।
এনসিটিবি জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির বই ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির বই ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি। এর বাইরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) বই, ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য শিক্ষক সহায়িকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজ আগেভাগেই শুরু করে এনসিটিবি। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত না হওয়ায় ছাপার কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার প্রথম বছরে বই নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। বিতর্ক এড়াতে এবার বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে সতর্ক ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ছাপাখানায় দেরি করে পাণ্ডুলিপি পৌঁছানোয় দেরি করে ছাপার কাজ শুরু হয়। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি
সব বই উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছিল এনসিটিবি। তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
রাজধানীর কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর জন্য বই এসেছে। তবে বইয়ের সেটে সব বই নেই। শিক্ষার্থীরা সব বই না পেয়ে হতাশ।
বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া রহমান বলেন, উৎসব করে বই দেওয়া হলেও এখনো সব বই পাইনি। এ পর্যন্ত ৯টি বই পেয়েছি। দুটি পাইনি।
স্কুলে বই চাইলে তারা বলছে, এখনো আসেনি। কবে দেওয়া হবে, তাও নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। বই না পাওয়ায় অনেক পড়া এখনো শুরু করতে পারিনি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ভূঁইয়া আবদুর রহমান বলেন, বর্ণমালা স্কুলে সপ্তম শ্রেণির খ্রিষ্টান ধর্ম বইসহ অষ্টম শ্রেণির কয়েকটি বই এখনো আসেনি। তবে শিক্ষা অফিসে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে বইগুলো দ্রুত পাঠায়।
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ বলেন, নবম শ্রেণির কিছু বই এখনো বাকি রয়ে গেছে। আশা করছি, দ্রুত চলে আসবে।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চলতি সপ্তাহে সব বই পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদালয়টির অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির কিছু বই বাকি ছিল। এ নিয়ে এনসিটিবিকে বারবার বলার পর চলতি সপ্তাহে সেগুলো পৌঁছেছে।
তবে সব বই না পাওয়ার কথা জানিয়েছে খান হাসান আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক প্রণতি সরকার বলেন, প্রাথমিকের সব বই বাচ্চারা পেয়েছে। তবে মাধ্যমিকের অষ্টম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বই বাদে বাকি বই চলে এসেছে।
ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ কালবেলাকে বলেন, স্কুল ও মাদ্রাসার কিছু বই এখনো বাকি রয়ে গেছে। কিছু প্রকাশনা থেকে ঠিক সময়ে বই না আসায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্যা কেটে যাবে।
এদিকে, বই না পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকায় রয়েছে রাজধানীর বাইরের প্রতিষ্ঠানও। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার সরকারি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার আলম জানান, অন্য সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা সব বই পেলেও নবম শ্রেণির কিছু বই এখনো বাকি রয়েছে। এসব বইয়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে সবগুলো বই পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান।
এনসিটিবি বলছে, কয়েকটি প্রেসে স্কুল ও মাদ্রাসার মাধ্যমিকের বই এখনো আটকে রয়েছে। এর মধ্যে একটি অনুপম প্রিন্টার্স। জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে অনুপম প্রিন্টার্সের মালিক মির্জা আলী আশরাফ কাশেম বলেন, ১০ দিন আগেই সব বই চলে গিয়েছে। এনসিটিবি চাইলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারে।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সব বই দেওয়া হয়েছে। কোথাও চাহিদা থাকলে আমাদের কাছে চাইলে বাফার স্টক থেকে হোক বা ছাপিয়ে বই দেওয়া হবে। কিন্তু চাহিদার কথা এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের জানায়নি। হয়তো উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বই রয়ে গেছে অথবা স্কুল থেকে নেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দু-একটি বাদে বাকি সব ছাপাখানার বই উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। স্কুল পর্যায়েও বিতরণ করা হয়েছে। ওই ছাপাখানাগুলো এখনো সব বই দিতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।