ইট-পাথরের এ শহরে বুকভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা একদম নেই বললেই চলে। তবুও সময় পেলে একটু স্বস্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন নগরবাসী। এক্ষেত্রে হাতিরঝিল তাদের কাছে বেশ পছন্দ। নিরিবিলি পরিবেশ, বাহারি গাছগাছালি, বসার সুব্যবস্থা, আলোকসজ্জা—সবমিলিয়ে শহরের যান্ত্রিকতার মধ্যেই যেন ভিন্ন জগৎ। রাজধানীবাসীর স্বস্তি ও জলাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে এবার হাতিরঝিলের মতো কল্যাণপুরে আরেকটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এটি হবে মূলত জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক, যা রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতেও কাজ করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গাবতলীর গৈদারটেকের বেড়িবাঁধসংলগ্ন জলাধার কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ জলাধারের জন্য ৫৩ একর জায়গা ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। পাশে করপোরেশনের আরও ৫৩ একর জমি রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রায় ১১৭ একর জায়গা রয়েছে, যা ড্যাপের নকশা অনুসারে ওয়াটার বডির আওতাভুক্ত রয়েছে।
বিশাল এ জলাধারের উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, পশ্চিমে বেড়িবাঁধ সড়ক, দক্ষিণে আদাবর এবং পূর্বদিকে গৈদারটেক এলাকা। মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার পানি এসে গাবতলীর এ জলাধারে জমা হয়। সেই পানি পাম্পের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
সূত্র বলছে, ইকোপার্কটি নির্মাণ হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের পানি গিয়ে এখানে জমা হবে। পরে এগুলো পাম্প করে তুরাগ নদে ফেলা হবে। এতে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে ঢাকার বড় একটি অংশ। পাশাপাশি নগরবাসী হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক একটি হাইড্রো ইকোপার্ক পাবে। সম্প্রতি জলাধারের ৫৩ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখন সেখানে মাটি খনন ও নকশা তৈরির কাজ চলছে। ভেকু মেশিনের সাহায্যে মাটি খনন, পাশাপাশি আশপাশের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, জলকেন্দ্রিক ইকোপার্কে থাকবে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন, শিশুদের খেলার জায়গা, কৃষি উদ্যান, প্রজাপতি ও পাখির অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপসহ নানা আয়োজন। এ প্রকল্পে মোট ১০টি অঞ্চল থাকবে, যার মধ্যে পাঁচটিতে থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগানো পরিবেশ। যেখানে রাখা হবে প্রজাপতির উন্মুক্ত স্থান, জীববৈচিত্র্যময় দ্বীপ, পাখির আশ্রয়স্থল, জলজ পার্ক—সবগুলোতে থাকবে জলপথ। পর্যটকরা ১০টি অঞ্চলেই নৌযানে ঘুরতে পারবেন।
১৪টি পয়েন্ট দিয়ে এ ইকোপার্কে প্রবেশ করা যাবে, থাকবে না কোনো প্রবেশমূল্য। পানির ওপর দিয়ে এবং পাশ দিয়ে থাকবে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন। তার পাশে থাকবে কৃষিজমি, কোল্ড স্টোরেজ, সৌর জল শোধনাগার।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডে হাইড্রো ইকোপার্ক করতে গিয়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সব বয়সের মানুষের জন্য এ ইকোপার্ক করা হবে। এখানে আমরা সিটি ফরেস্ট গড়ে তুলব। ফলে এটি বিনোদনকেন্দ্রের পাশাপাশি রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন করবে।
জানা গেছে, বর্তমানে হাইড্রো ইকোপার্কের নকশাসহ নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে নকশা প্রণয়নের কাজ করছে ডিএনসিসি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ জলকেন্দ্রিক ইকোপার্কের কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি।
মন্তব্য করুন