কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে পারে ছাত্র বিক্ষোভ

আলজাজিরার বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে পারে ছাত্র বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন সপ্তাহে গড়ানো ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র বিক্ষোভ ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে পারে বলে আলজাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজ অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি বলেছেন, এ আন্দোলন যদি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে দুই দেশের সম্পর্কে একটা পরিবর্তন আসতে পারে। যদিও গত বুধবার মারমুখী পুলিশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের তাঁবু সরিয়ে ফেলে আন্দোলন এক ধরনের পণ্ড করে দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটাই শেষ নয়, তারা আবার ফিরে আসবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজায় গণহত্যা ও ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করা হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ক্যাম্পাসগুলো ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। তবে ফ্রান্সের প্যারিসে সায়েন্স পো বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার পুলিশ ঢুকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এখানে অনেক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনেও বসেছিলেন। তাদের তাঁবু সরিয়ে হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পুলিশ। খবর আলজাজিরার।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজ অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি বলেছেন, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্যালেস্টাইনপন্থি বিক্ষোভগুলো একটি বড় ধরনের প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও মার্কিন শিক্ষার্থীরা

ইসরায়েলের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল ছিলেন। গাজায় অনেক আগে থেকে ইসরায়েলি বর্বরতা চলছে। কিন্তু এর আগে কখনো সেভাবে মার্কিন শিক্ষার্থীদের এর প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। চলমান ইসরায়েলি বর্বরতা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে যাওয়ায় ধৈর্যের বাঁধও যেন ভেঙে গেছে মার্কিন শিক্ষার্থীদের। এর আগে সর্বশেষ ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ করে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, যে বিক্ষোভ কাঁপন ধরিয়েছিল মার্কিন প্রশাসনে। এবারও সে ধরনের একটি বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রজন্মগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এ বিক্ষোভ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের নতুন একটা চিত্র দেখা যেতে পারে। এলমাসরি আলজাজিরাকে বলেন, এ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে এই প্রথম ফিলিস্তিনি ইস্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঘরোয়া ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এটি কমবেশি মূলধারায় পরিণত হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে পড়ালেখা করছেন। এখানে শুধু মার্কিন শিক্ষার্থীরা নয়, বিভিন্ন মহাদেশের এমনকি অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। কাজেই এ বিক্ষোভ নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। তরুণরাই

মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের নতুন পটভূমি রচনা করতে পারে।

এদিকে বুধবার রাতে বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের তাঁবু সরিয়ে ফেলার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি এখন কার্যত শান্ত। সেদিন মারমুখী পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় শিক্ষার্থীদের। এক রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে। গত ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আন্দোলন পণ্ড হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটাই শেষ নয়। তারা যে কোনো সময় ক্যাম্পাসে ফিরে আসবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এবার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁবু ফেলে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দেশটির শীর্ষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুক্রবার বিক্ষোভ করেন শত শত বিক্ষোভকারী। গাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এ বিক্ষোভ করছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সব নগরীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে তাঁবু বসিয়ে বিক্ষোভ করছেন। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা গত সপ্তাহে প্রধান হলের বাইরে জড়ো হয়ে তাঁবু ফেলে অবস্থান নেন। এ ছাড়া মেলবোর্ন, ক্যানবেরা এবং অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরগুলোতে একই ধরনের শিবির স্থাপন করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ এখনো বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থানে যায়নি। শুক্রবার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভে অংশ নেয় তিন শতাধিক বিক্ষোভকারী। এর মধ্যে ৩৯ বছর বয়সী ম্যাট তার দুই বছরের ছেলেকে কাঁধে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শুধু ছাত্রসমাজই বিরোধিতা করছে না। সেখানে কী হচ্ছে সেটি একবার অনুধাবন করতে পারলে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টিতে জড়িত হওয়া, সচেতনতা বাড়ানো এবং সংহতি প্রকাশের চেষ্টা করা।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচক হয়ে উঠেছে। গত মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অস্ট্রেলিয়ার এক ত্রাণকর্মীও নিহত হন। তবে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকার শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়াতেই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, সকালে মিলল স্বামীর মরদেহ

টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

বন্ধু হারাচ্ছে ইসরায়েল, চাপে নেতানিয়াহু

রাজধানীতে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন

সৌদি পৌঁছেছেন ২৭ হাজারের বেশি হজযাত্রী

ধান কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, নিহত ১

হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ সুধা রানী, যে ব্যাখ্যা দিল এনটিআরসিএ

৬ তলার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

ঝালকাঠিতে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ৭

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রাজধানীতে স্বস্তি

১০

একাদশে ভর্তি / নটর ডেমে আবেদন ২৫ মে শুরু হয়ে চলবে ৩০ মে পর্যন্ত

১১

বাংলাদেশি সমর্থকদের বিশ্বকাপ উপভোগে বাধা ‘টাইম জোন’!

১২

ছুটির দিনে ঢাকার বাতাস কেমন?

১৩

সাতক্ষীরায় ধান বোঝায় ট্রাক উলটে নিহত ২

১৪

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী ‘অভিশপ্ত নীলকুঠি’

১৫

দুপুর ১টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৬

রিকশাচালকের পা ভেঙে দেওয়া সেই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার

১৭

ধানের বাম্পার ফলনের পরও হতাশ কৃষক

১৮

হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা এড়াতে যা করবেন

১৯

বাঁশ-দড়ি বেয়ে মসজিদে যান ১১৫ বছর বয়সী অন্ধ মোয়াজ্জিন

২০
X