নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের অবদানগুলো গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে। কিন্তু উন্নয়ন প্রচারের কোনো কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, উন্নয়ন প্রচারের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া ‘উন্নয়নের মহাসড়কে জয়রথে বিজয়ের জয়ধ্বনি’ শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ তো দূরের কথা, কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি সমাজসেবা অধিদপ্তর।
প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ের আলোচ্য প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চায় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এজন্য মেয়াদ বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত মেয়াদে প্রকল্পের কোনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় মেয়াদ বৃদ্ধি না করে প্রকল্প সমাপ্তির জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
আলোচ্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘উন্নয়নের মহাসড়কে জয়রথে বিজয়ের জয়ধ্বনি’ শীর্ষক ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই আলোচ্য প্রকল্পটি এ পর্যায়ে মেয়াদ বৃদ্ধি ব্যতিরেকে সমাপ্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্প সমাপ্তির ন্যূনতম তিন মাস আগে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব আইএমইডিতে প্রেরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পের মেয়াদ ছিল মার্চ পর্যন্ত। মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয় এপ্রিলের ৭ তারিখে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস ছয় দিন পর এবং নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত সময়ের চার মাস পর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, যেহেতু নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ হয়নি তাই মেয়াদ বৃদ্ধি না করে প্রকল্প সমাপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে। অনেক সময় কিছু কাজ হলেও শেষ করার যৌক্তিকতা থাকে, কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পে মেয়াদ শেষ হলেও কোনো কাজ হয়নি। একই সঙ্গে যেহেতু নির্ধারিত মেয়াদে কোনো কাজই শুরু করেনি, তাই এটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভেবে দেখা দরকার। তাই এটা এখানেই শেষ করতে বলা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক স্বপন কুমার হালদার কালবেলাকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ফিল্ম এবং টিভিসিসহ অনেক কিছু বানানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে তা করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে কিছু খাত যোগ-বিয়োগ করে ডিপিপি সংশোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যেটুকুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটুকু থাকবে, আবার নতুন কিছু যুক্ত হবে।
আইএমইডির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন কুমার হালদার বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যদি মেয়াদ বৃদ্ধি না করে, তাহলে তো কিছু করার নেই। যদি করে তাহলে ডিপিপি সংশোধন করে বাস্তবায়ন করা হবে। দেরিতে প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ডিপিপি সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তাই প্রস্তাব পাঠাতে দেরি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মেয়াদে বাস্তবায়নের আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে উন্নয়ন প্রচারে এত বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি উন্নয়ন প্রচারে নেওয়া প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তার পরও ২০২৩ সালের আগস্টে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা কমিশন।
সে সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেছিলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও জনবান্ধব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা ও তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন করা হবে।