অবৈধভাবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সফটওয়্যার থেকে ৩ হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু করায় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. সাইদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। অন্যকে লাভবান ও নিজে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পরের যোগসাজশে অতিরিক্ত স্মার্ট কার্ড ইস্যু করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএমইটি থেকে গ্রুপ বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের স্বাভাবিক নিয়ম হলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার পর তার কপি বিএমইটিতে যায়। পরে বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা এন্ট্রি (প্রবেশ) দেওয়া হয়। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সি বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে। আবেদনপত্রটি নথিতে উপস্থাপন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। নথিতে অনুমোদিত হলে সে অনুযায়ী বহির্গমন বা কল্যাণ ফিসহ অন্যান্য ফি ও আয়করের যথাক্রমে পে-অর্ডার ও চালান কপি জমা নেওয়া হয় এবং সফটওয়্যার সিস্টেমে এন্ট্রি দেওয়া হয়। এরপর কর্মীর সংখ্যা অনুযায়ী অনুমোদন নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। এরপর নিতে হয় অনলাইন অনুমোদন। সেখানে ‘পারমিট সাকসেসফুল’ দেখানোর পর ‘ক্লিয়ারেন্স ফর্ম ও রাইট’ নম্বর লেখা হয় এবং ডেস্ক সহকারী ও সহকারী পরিচালকের স্বাক্ষরসহ ডাটা এন্ট্রি শাখায় পাঠানো হয়। ওই শাখার সফটওয়্যারে কর্মীদের তথ্যাদি এন্ট্রি দেওয়া হয়। ‘পারমিট নম্বর’ ‘রাইট নম্বরে’ উল্লিখিত কর্মীর সংখ্যার সমপরিমাণ কর্মীর তথ্য এন্ট্রি দেওয়া যায়, এর বেশি দেওয়া যায় না। কর্মীর তথ্যাদি এন্ট্রি দেওয়ার পর স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং শাখা থেকে কার্ড প্রিন্ট দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের প্রয়োজন হবে তা শুধু আইটি শাখার সিস্টেম এনালিস্ট করতে পারেন, অন্য কারও এসব বিষয়ে কিছু করার ক্ষমতা নেই।
অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত গ্রুপ বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যার সঙ্গে বিএমইটির ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ছাড়পত্রের সংখ্যায় তারতম্য দেখা যায়। দেখা যায়, অনেক সংখ্যা সম্পাদনা ও মুছে দিয়ে কমানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে প্রদানকৃত নিয়োগানুমতির সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারের বহির্গমন শাখায় দৈনন্দিন গৃহীত কল্যাণ ফিসহ অন্যান্য ফি ও আয়করের পে-অর্ডার ও চালান এবং স্মার্ট কার্ড ইস্যুর সংখ্যা যাচাই করে দুদক। যাচাইকালে তারা দেখতে পায়, অভিযোগপত্রে উল্লিখিত রিক্রুটিং এজেন্সির বিএমইটির সফটওয়্যারে উল্লিখিত ‘ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টের’ গ্রুপে ইস্যুকৃত স্মার্ট কার্ডের সংখ্যার চেয়ে দৈনন্দিন হিসাবে প্রকৃতপক্ষে ইস্যুকৃত কার্ডের সংখ্যা অনেক বেশি।
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, ৮টি রিক্রুটিং এজেন্সির ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়োগানুমতির সংখ্যা ২ হাজার ৯৬০টি। কিন্তু বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার থেকে স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৮টি। অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৭৮টি কার্ড বিএমইটি কর্তৃক অবৈধভাবে ইস্যু করা হয়েছে।