কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪, ০৯:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদ আনন্দ

পর্যটক কম, ব্যবসাও কম

পর্যটক কম, ব্যবসাও কম

প্রতিবারের মতো এবারও সারা দেশে পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের টানতে নানা আয়োজন ও উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের আশা ছিল, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে সে আশায় গুড়েবালি। বড় বড় পর্যটন কেন্দ্রে আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি। বিশেষ করে কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবান, শ্রীমঙ্গলে গত বছরগুলোর তুলনায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীর পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে তেমন একটা ভিড় ছিল না। কারণ কোরবানির মাংস কাটা-রান্নাসহ নানা কারণে ঈদের দিন ঘর থেকে বের হয়নি রাজধানীবাসী। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিন অনেকেই ঘুরতে বের হওয়ায় রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।

গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর ও চন্দ্রিমা উদ্যান, শ্যামলীর শিশু মেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। এ ছাড়া ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার ও বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর বন্ধ ছিল। যার কারণে অনেককে এ দুই বিনোদন কেন্দ্র ঘুরতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে গতকাল এ স্থান দুটি খোলা থাকায় অনেকে ঘুরতে এসেছেন।

তবে রাজধানীর বাইরে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকের উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না বলে জানিয়েছেন আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি। তিনি জানান, ঈদের পর্যটক বরণ করতে প্রস্তুতি নেন পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হলেও কক্সবাজারকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। সুরক্ষা করা হচ্ছে না পর্যটন স্পটগুলো। সৌন্দর্য রক্ষায় গঠিত বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরাও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে কক্সবাজার বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা। এ অবস্থায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে এমন সব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।

হোটেল মালিকদের মতে, সৈকত শহরে হোটেল-মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদের সময় হোটেলগুলোর প্রায় ৭০ ভাগ বুকিং থাকত। কিন্তু এবারে দু-একটি হোটেল ছাড়া আর কোনো হোটেলে বুকিং হয়নি। কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটকদের সেবা দিতেই মুখিয়ে থাকি আমরা। এবারও ব্যতিক্রম ছিল না, কিন্তু এত কম পর্যটক আসবে আমরা ভাবিনি । সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটকদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। যার কারণে দিন দিন কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আমি মনে করি, বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার সময় এসে গেছে। হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিসার সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের বুকিং সন্তোষজনক। তার পরও শতভাগ বুকিং হয়নি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। রয়েছে বুফে লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থাও।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, আমাদের আশা ছিল কোরবানির ছুটিতে পর্যটকে ভরে যাবে বেলাভূমি কক্সবাজার। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি। এত কম পর্যটক আসবে—সেটি আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি বলেন, বিচ ছাড়া কক্সবাজারে দেখার কি আছে? এক দিনে কক্সবাজারে ঘুরে বেড়ানো যায়। সেন্টমার্টিনও যাওয়া যাচ্ছে না। তাই কক্সবাজারে আসছেন না পর্যটকরা। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারে বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটক যাই আসুক ছুটির দিনগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকে আমাদের। ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ও ইনানীতে সচেষ্ট থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের পর দেশের অন্যতম বড় পর্যটন কেন্দ্র সিলেট। পাহাড়ি ঢল আর অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য। ঈদের সময় ভালো ব্যবসা হয় হোটেল, রিসোর্ট, দোকানপাটগুলোর। কিন্তু আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির জন্য সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আমাদের সিলেট জেলা প্রতিনিধি জানান, আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা। বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই দুই উপজেলার সবকটি পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে দুই উপজেলা প্রশাসন। এর ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছানাকান্দি, জলাবন রাতারগুল, পান্থুমাই এবং কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর, উৎমা ছড়াসহ জনপ্রিয় পযর্টনকেন্দ্রগুলোতে আপাতত যেতে পারবেন না পর্যটকরা।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সিলেটের গোয়াইনঘাটে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, জনস্বার্থে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।

এদিকে, ঈদের ছুটিতে রাঙামাটির সাজেকে,পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, গতকাল বুধবার সাজেকের হাতেগোনা কয়েকটা ছাড়া বাকি সব কটেজ রিসোর্ট শতভাগ বুকিং রয়েছে। ১৮ জুন সাজেকের দুই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হলে সেদিন পর্যটকের চলাচলে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয়। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়িতে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে। যার প্রভাব পর্যটকদের ওপর পড়ছে না বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। তাদের দাবি, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি আরও বাড়িয়ে দেওয়া হোক।

অন্যদিকে রাঙামাটি শহর ও শহরের আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঝরনাগুলোতে যৌবন ফিরেছে। যার কারণে সুবলং ঝরনা, ঘাগড়া ঝরনায় পর্যটকের পদচারণা বেড়েছে; পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই আসামবস্তী সড়কসহ রাঙামাটির টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে তাঁতে বোনা বাহারি রং ও ডিজাইনে পোশাক ও বাহারি স্থানীয় পণ্য কিনতে পর্যটকের পদচারণা দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বাড়ের চেয়ে পর্যটক কিছুটা কম বলে দাবি রাঙামাটি হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের। একইভাবে বান্দরবানের পর্যটন স্থানগুলোতে পর্যটকদের ভিড় ছিল।

আমাদের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি জানান, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের আগাম বুকিং কম বলে জানাচ্ছেন হোটেল-রিসোর্ট মালিকরা। শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরের বাইরের হোটেল-রিসোর্টগুলোতে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত শহরের হোটেল-রিসোর্টগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ রুম আগাম বুকিং হয়নি। সিলেটের বন্যার প্রভাব পড়েছে শ্রীমঙ্গলে। বালিশিরা রিসোর্টের ম্যানেজার এম ডি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, জেলায় প্রায় তিনশর মতো রিসোর্ট আছে, আমি যতটুকু খোঁজখবর নিয়েছি, শুধু আমার রিসোর্ট না, প্রায় সব রিসোর্টেই এ পরিস্থিতি চলছে, রিজারভেশন খুব বেশি আসছে না। এর দুটি কারণে হতে পারে, প্রথমত এখন আবহাওয়া খারাপ, বৃষ্টি-বাদলের জন্য আমাদের সমস্যা হচ্ছে, দ্বিতীয়ত সিলেটের বন্যার জন্য মানুষ মনে করছে যে, শ্রীমঙ্গলে ও হয়তো বন্যা হচ্ছে, তাই আমরা সেই পরিমাণে সারা পাচ্ছি না। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি থাকলেও, ব্যবসা ভালো হয়নি বলে জানা গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুই ট্রেনের হাজারো যাত্রী

আর্জেন্টিনা ভক্তদের জন্য সুখবর, মাঠে ফিরেছেন তারকা ফুটবলার

দুই হাতে বল নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ‘বাইক স্ট্যান্ট’, ভিডিও ভাইরাল

সব বলে দেওয়ার হুমকি দিলেন ঢাবি ভিসি

পাওনা ৭০০ টাকায় কাল হলো রিকশাচালকের

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২ বন্ধু আটক

 অমর্ত্য সেনকে কি বাংলাদেশে বের করে দেবে ভারত?

রাজধানীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ , যান চলাচল বন্ধ

ডিভোর্সের গুঞ্জন, মুম্বাই বিমানবন্দরে গোবিন্দ

১০

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, আবেদন করুন আজই

১১

উপদেষ্টারা অসহায়, সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারাই : ফখরুল

১২

ড. ইউনূসের কারণে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ : প্রেস সচিব

১৩

নির্বাচন নিয়ে অনৈতিক চাপ দিলে পদত্যাগ করব : সিইসি

১৪

যাতায়াত সুবিধাসহ আরএফএল গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে ইরানের সেনাপ্রধানের হুংকার

১৬

বাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ইরানের অনুকরণে ব্যবস্থার ঘোষণা সিরিয়ার

১৭

সকালে সময় বাঁচাতে রোজ পাউরুটি খাচ্ছেন? চিকিৎসকদের স্পষ্ট সতর্কবার্তা

১৮

ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা যাবে সন্ধ্যায়

১৯

নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০
X