কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ
স্বাস্থ্য পরামর্শ

রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান
রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

বাংলাদেশে সরিষার তেল ঐতিহ্যবাহী রান্নার উপাদান। ভাজা, ভর্তাসহ বিভিন্ন খাবারে সরিষার তেল বহুল ব্যবহৃত। অনেকে মনে করেন এটি খাঁটি ও প্রাকৃতিক, তাই স্বাস্থ্যকর; কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ও অধিক পরিমাণে সরিষার তেল ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

সরিষার তেলে ‘এরুসিক অ্যাসিড’ নামক এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। গবেষণা বলছে, দীর্ঘমেয়াদে এরুসিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার হৃদযন্ত্রের ক্ষতির কারণ। বিশেষ করে হার্টে ও পেশিতে চর্বি জমে মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস নামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিউরের কারণ।

সরিষার তেল দিয়ে ভাজার সময় উচ্চ তাপে তেল পুড়ে গিয়ে ট্রান্স-ফ্যাট তৈরি হয়। ট্রান্স-ফ্যাট শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর চর্বি। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) কমিয়ে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে রক্তনালি সংকুচিত হয়, যা উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

শিশু ও বয়স্কদের জন্য সরিষার তেল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এরুসিক অ্যাসিড শরীরের বৃদ্ধি ও হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় বাধা দেয়। অন্যদিকে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ডায়াবেটিস ও কিডনির কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে।

দীর্ঘদিন নিয়মিত সরিষার তেল খাওয়ার সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণা এখনো চলমান, তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, সরিষার তেলে থাকা কিছু উপাদান কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, খাবারে স্বাস্থ্যকর তেল বেছে নেওয়া অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। তুলনামূলকভাবে সয়াবিন, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখীর তেল বা ক্যানোলা অয়েল হার্টের জন্য নিরাপদ। এসব তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও এরুসিক অ্যাসিড কম থাকে, ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম।

করণীয়: খাবারে ও ভাজার ক্ষেত্রে সরিষার তেলের ব্যবহার এড়িয়ে চলা; বিকল্প স্বাস্থ্যকর তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করা; জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

সুস্বাদু খাবারের জন্য আমরা সরিষার তেলের স্বাদ নিতে পারি, তবে দৈনন্দিন রান্নায় এটির ব্যবহার ভবিষ্যতে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তাই সচেতন হওয়া জরুরি। জীবনযাপনের ধরন, গতানুগতিক খাদ্যাভ্যাস, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি সচেতনতা, উপযুক্ত আবাসন ও স্যানিটেশন, অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার, ফাস্টফুডসহ ট্রান্সফ্যাটযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার, সুগার-সুইট-বেভারেজ, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার এবং সর্বোপরি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ-প্রতিবেশ ইত্যাদি সূচক অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। তাই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বহু খাতভিত্তিক সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান

সাবেক পরিচালক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে প্রাক্তন স্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন হৃতিক

ফেসবুকে লাইভ দিয়ে ফেঁসে গেলেন যুবক

ক্লাসে মোবাইল ব্যবহারে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের নির্দেশনা

বরিশালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫, নতুন আক্রান্ত ১৭৯

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নির্মূলে ডাকসুর কর্মসূচি ঘোষণা

বিশ্লেষণ / পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংকট এবং এর আঞ্চলিক অভিঘাত

কোরআন তেলাওয়াত চালিয়ে রেখে অন্য কাজ করলে কী হয়, জেনে নিন

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে লাগবে যেসব দলিল

নিষিদ্ধ দলের কর্মসূচি প্রচার করছে দু-একটি মিডিয়া : রিজভী

সাবেক মন্ত্রী নওফেলের বাসায় পুলিশের অভিযান, আটক ৬

১০

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস জয়ের, শতকের অপেক্ষায় মুমিনুল

১১

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি বিশ্বাস করো’

১২

পায়রা নদীতে ধরা পড়ল ১৮ কেজির বিশাল পাঙ্গাশ

১৩

কেরোসিন তেল কি নাপাক, জেনে নিন এখনই

১৪

টেইলরের পাশে সেলেনা

১৫

পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে যে তথ্য দিলেন অর্থ উপদেষ্টা

১৬

আন্দোলনরত ৮ দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৭

নিলামের আগে বিপিএলে এখন পর্যন্ত দল পেলেন যারা

১৮

বঙ্গোপসাগরে বড়শিতে ধরা পড়ল ৩৭ কেজির ‘কালো পোয়া’

১৯

গাঁজা সেবনকালে রাবির ৭ শিক্ষার্থী আটক

২০
X