গেঁটে বাত বা গাউট এক ধরনের বাত। রোগটি হলে অস্থিসন্ধি ফোলে ও ব্যথা হয়। প্রথমেই পায়ের বুড়ো আঙুলের জয়েন্ট আক্রমণ করে। পরে অস্থিসন্ধি ফুলে আরও কিছু জায়গায় ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কারণ
গেঁটে বাত হয় ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্যের ফলে। ইউরিক অ্যাসিড একটি রাসায়নিক পদার্থ, এটি খাবার গ্রহণের পর দেহে ভেঙে তা হতে উৎপন্ন হয়। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ধারালো সুচের মতো স্ফটিক (ক্রিস্টাল) তৈরি করে, যা অস্থিসন্ধিতে জমে প্রদাহের সৃষ্টি করে।
উপসর্গ
প্রথমে বুড়ো আঙুলের অস্থিসন্ধি, গোড়ালি বা হাঁটুতে তীব্র ব্যথা হয়।
অস্থিসন্ধি লাল হয় ও ফুলে যায়।
গেঁটে বাতের আক্রমণ সাধারণত রাতে হয়।
একাধিক অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয়।
গেঁটে বাতে প্রথমে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয় ও স্থানটি ফুলে যায়।
উপসর্গগুলো কয়েক দিন হতে শুরু করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে এটি কীভাবে বন্ধ হয়, তা এখনো জানা যায়নি।
রোগ নির্ণয়
ব্যথাযুক্ত অস্থিসন্ধি হতে তরলের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে এতে গেঁটে বাতের স্ফটিক আছে কি না। যদি স্ফটিক থাকে তবে তা গেঁটে বাত।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা দেখে বা সেইসঙ্গে উপসর্গ দেখেও রোগ নির্ণয় করা যায়।
এক্সরে বা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাতেও এ রোগের জন্য দায়ী ক্রিস্টাল ধরা পড়তে পারে।
চিকিৎসা
গেঁটে বাতের জন্য উপযুক্ত ওষুধ আছে। প্রথমত ব্যথা কমাতে অনেক সময় নন-অ্যাস্টারয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হতে পারে। আবার গাউট ইনফ্ল্যামেশন কমাতে কোর্টিকোঅ্যাস্টারয়েড জাতীয় ওষুধও অনেক সময় দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আবার অনেক সময় রক্তচাপ বা রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
গেঁটে বাত বা গাউটের ব্যথা কমাতে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করালেও উপশম পাওয়া যায়। তবে এ চিকিৎসা ব্যবস্থাটি উপসর্গভিত্তিক। সব উপসর্গ ও রোগীর অবস্থা চুলচেরা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকেই নিতে হবে ব্যবস্থাপত্র।
অনেক রোগীর গেঁটে বাতের সঙ্গে অন্যান্য রোগও থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, স্থূলতা, হৃদরোগ, কিডনি রোগ। সমস্যাগুলো থাকলেও গেঁটে বাত হতে পারে।
প্রতিরোধ
ইউরিক অ্যাসিডজনিত এ রোগ প্রতিরোধই উপযুক্ত সমাধান। এর জন্য—
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
সুষম খাবার খেতে হবে।
প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ব্যায়াম করতে হবে।
প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।
কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
লিভার, কলিজা, গিলা, কিডনি জাতীয় মাংস কম খেতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ, লাল মাংস, কাঁচা লবণ, ফলের রস পরিমিত খেতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে
বিরত থাকতে হবে।
লেখক : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার, ঢাকা
মন্তব্য করুন