জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নওগাঁ জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির ২৩নং সদস্য করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত নেতা গোলাম রাব্বানী নামে এক ব্যক্তিকে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে এনসিপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩৫ সদস্যের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনিরা শারমিনকে।
এদিকে সদ্যঘোষিত কমিটিতে জায়গা পাওয়া গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কারের অভিযোগ উঠেছে। আর এই কারণে সদ্য ঘোষিত এনসিপির কমিটিতে স্থান পাকাপোক্ত করতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিতর্ক ওঠা গোলাম রাব্বানী এমন অভিযোগ গণঅধিকার পরিষদের একাধিক নেতার।
তবে শুক্রবার (২০ জুন) সকাল ১০টায় নওগাঁ শহরের একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কারের বিষয়টি অস্বীকার করে নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ‘আমি ২০২১ সাল থেকে গণ অধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এটাই আমার প্রথম রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু দলটির অভ্যন্তরীণ অগণতান্ত্রিক আচরণ, চাপ প্রয়োগ এবং নেতিবাচক রাজনীতির কারণে আমি গণঅধিকার পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছি।’
গোলাম রাব্বানী দাবি করেন, যেহেতু আমি একজন ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সময় আমাকে চাপে ফেলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং অনুদান দিতে বাধ্য করা হতো। তবে আমি কখনোই আওয়ামী লীগের সদস্য বা দায়িত্বশীল পদে ছিলাম না।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার তারিকুল ইসলাম দীপুর মাধ্যমে পরিচিত হয় জেলা সংগঠক দেওয়ান মাহবুব আল হাসান সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে। তার নেতৃত্ব এবং তরুণদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক ভাবনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি, সুজন মণ্ডল ও জিয়াউর রহমান মিলে এনসিপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
এর আগে, গত ৫ জুন তাকে গণঅধিকার পরিষদের নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামানের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে গণঅধিকার পরিষদের নওগাঁ জেলার আহ্বায়ক মো. গোলাম রাব্বানীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে। ২০২৪ সালে মে মাসে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের চেয়ারম্যান নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করেন গোলাম রাব্বানী। সেই নির্বাচনে দুই হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি। নির্বাচনের সময় একাধিক পত্রিকায় গোলাম রাব্বানীর পক্ষে ভোট চেয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল গোলাম রাব্বানীর পরিচয় ও পারিবারিক ইতিহাস। কখনো তাকে রাণীনগর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য আবার কখনও সমর্থক পরিচয় দিয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া তুলে ধরা হয় তার পরিবারের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের ফিরিস্তি।
যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কমিটি ও রাজশাহী আঞ্চলিক উপকমিটির সদস্য এসএম সাব্বির হোসেন কালবেলাকে বলেন, নওগাঁ জেলা গণধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরপরই আমরা জানতে পারি গোলাম রাব্বানীর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। পরবর্তীতে আমি নিজে কেন্দ্রকে বিষয়টি অবগত করি। সর্বশেষ গোলাম রাব্বানীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে গত ৫ জুন গণধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষরে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বহিষ্কার করার বিষয়টি অস্বীকার করেন গোলাম রাব্বানী। তিনি মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, ‘আমি গত ১১ জুন গণঅধিকারে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেই। এরপরও দলটি তা গ্রহণ না করে তারা ব্যাকডেটে মিথ্যে বহিষ্কার আদেশ লিখে ১৮ তারিখে প্রচার করল।’
তিনি বলেন, ‘আমি গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় এনসিপির লোকদের সঙ্গে প্রোগ্রাম করেছি আমাদের ব্যানারেই।’ আপনি তাহলে সমঝোতা করে চলেন? এমন প্রশ্নে তিনি একটু উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন একটি রাজনৈতিক দলে আছি, আমি পদধারী একজন ব্যক্তি। আমি এখন আর সমঝোতার মধ্যে নেই, যখন দল করিনি তখন সমঝোতা ছিল। আমার এনসিপির নীতি-আদর্শ ভালো লেগেছে। এটা আমার নৈতিক অধিকার। আমি স্বাধীন বাংলাদেশে যে কোনো দল করতে পারি, তাই এনসিপির নওগাঁ জেলা কমিটিতে যোগদান করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমার নীতি-আদর্শে যে দল ভালো লাগবে, সেই দল করব।’ তার মানে জামায়াত ও বিএনপিও করবেন? এমন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আর কেউ অন্য দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই, শুধু আমার বেলায় এমন কেন? এনসিপির কার্যক্রম ভালো না লাগলে আর রাজনীতি করব না।’ এ সময় এই প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন তিনি।
জানতে চাইলে এনসিপির নওগাঁ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মুনিরা শারমিন কালবেলাকে বলেন, ‘গোলাম রাব্বানীকে কমিটিতে নেওয়া হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখে। যেহেতু গণঅধিকার পরিষদ আওয়ামীবিরোধী ছিল। তাই গণঅধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে আসায় তাকে নেওয়া হয়েছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। শুধু গোলাম রাব্বানী নয়, আগামীতে এনসিপির আহ্বায়কের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আমরা কমিটিতে রাখব না।’
মন্তব্য করুন