পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছর পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে সাগরে। এতে বালু ক্ষয়ে ভেঙে যাচ্ছে পাড়। অব্যাহত ভাঙনের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটনকেন্দ্রের সৈকতের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সৈকত কোথাও নিচু, কোথাও উঁচু হয়ে গেছে।
এমনকি কোথাও কোথাও ছোট-বড় গর্ত হয়ে গেছে। পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা কুয়াকাটা সৈকত ও বেলাভূমি রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে সংরক্ষিত ঝাউ বন। আর নারিকেল গাছের মুড়োগুলো জানান দিচ্ছে একসময়ের নারিকেল বাগানের ঐতিহ্য। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে বালু ক্ষয়ের কবলে হারিয়ে গেছে সৈকতের সীমানা প্রাচীরসহ জাতীয় উদ্যান, এলজিইডির বায়ো গ্যাস প্লান্ট কাম রেস্ট হাউস, ডাকবাংলো, হোটেল কিংসসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বিলীনের পথে জাতীয় উদ্যানের সীমানা প্রাচীর। জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে দাঁত কেলিয়ে বেরিয়ে আছে ভাঙা প্রাচীরের রড। এ ছাড়া ভাঙা স্লাব ও ধারালো প্রান্তভাগ লুকিয়ে রয়েছে পানির ভেতর। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা।
সরেজমিন সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর বালু ক্ষয়ে বেশ ভাঙনের কবলে পড়েছে কুয়াকাটা। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পূর্ণিমার জোয়ারে সাগর ভয়ানকভাবে ফুঁসে ওঠে। বিশাল ঢেউ এসে সজোরে আঘাত হানে সৈকতে। এতে পাড়ের বিশাল অংশ ফাটল ধরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। গত কয়েকদিন আগে সৈকতঘেঁষা ১ হাজার ৩০০ মিটার সড়কের পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে।
পাশাপাশি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল লেম্বুর চর, ঝাউবন, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, সরদার মার্কেট, ট্যুরিজম পার্ক, কুয়াকাটা সৈকত জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এভাবে বালু ক্ষয় অব্যাহত থাকলে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ভেঙে আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম সড়ক না করার জন্য। তবে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের লোক দিয়ে খেয়াল খুশিমতো সড়কটি নির্মাণ করেন তিনি। সড়কটি তাদের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কুয়াকাটার স্থায়ী বাসিন্দা হোসেন ঘরামী বলেন, ২০০৭ সালের সিডরের আগেও বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতের দূরত্ব ছিল অর্ধ কিলোমিটার। সিডরের পরপরই সমুদ্রে বালু ক্ষয় দেখা দিলে কয়েক বছরের মধ্যে সৈকত লাগোয়া বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে যায়। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, সরদার মার্কেট, মসজিদ, মন্দির, ডিসি পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বালু ক্ষয় রোধে এখনি স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, সমুদ্রের বালু ক্ষয় এটি চলমান প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সৈকত লাগোয়া বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া মসজিদ, মন্দির, ট্যুরিজম পার্কসহ অনেক স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, প্রতি বছর জিও ব্যাগের নামে অর্থ লোপাটের যে মহোৎসব হয়, সেটিকে বন্ধ করে গ্রোয়েন বাঁধের স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করলে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা পাবে। সৈকতে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিওটিউব ও জিওব্যাগ অপসারণের দাবি জানান।
কুয়াকাটা সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলার এজিএম আল-আমিন খান বলেন, কুয়াকাটায় পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে সৈকত। সেই সৈকতের বর্তমানে বেহাল অবস্থা। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার্থে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহআলম বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষায় আমাদের একটি প্রস্তাব দেওয়া আছে। বর্তমান সৈকত রক্ষায় অস্থায়ীভাবে জিওব্যাগ ও জিওটিউব দিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে আমরা কাজ শুরু করব।
মন্তব্য করুন