শেখ মমিন, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কবরের জায়গা না পেয়ে এখনো লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা পাড়ের রাখালগাছি এলাকায় কবরস্থানের চিত্র। ছবি : কালবেলা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা পাড়ের রাখালগাছি এলাকায় কবরস্থানের চিত্র। ছবি : কালবেলা

যেদিকে চোখ যায় চারদিকে শুধু পানি আর পানি। চারদিকে পানির মধ্যে জেগে ওঠা একটি চরে বসবাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে বসবাসরত হাজারো মানুষ নানা জরুরি সেবা ও নাগরিক সুবিধা থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত। সবচেয়ে বিপত্তি বাঁধে বর্ষাকালে। এ সময় কেউ মারা গেলে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ কবরস্থান উঁচু না থাকায় পানিতে তলিয়ে যায়।

বলা যায়, পদ্মা পাড়ের এ অঞ্চলের মানুষ পুরোপুরি নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত রয়েছেন। এখানে যেন নজর নেই কারও।

বলছি, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের রাখালগাছি এলাকার কথা। উপজেলা থেকে রাখালগাছি যেতে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তারমধ্যে নদী পার হতেই সময় লাগে সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও রাখালগাছি অঞ্চলের মানুষ বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের এসবে কোনো নজর নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। তাই দ্রুতই বর্তমান সরকারের কাছে শতভাগ নাগরিক সুবিধার দাবি জানিয়েছেন রাখালগাছি অঞ্চলের মানুষ।

জানা যায়, রাখালগাছি এলাকা নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোই হলো তাদের একমাত্র ভরসা। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। এ পানির মধ্যে জেগে ওঠা চরে বসবাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। আর তাদের চলাচলের রাস্তাগুলোও হয়ে পড়েছে বেহাল দশা ও চলাচলের অনুপযোগী। শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অন্তঃসত্ত্বা ও বয়স্কসহ শিশুদের। কারণ হাসপাতালে যেতে তাদের ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নদী পার হতে হয়।

তারপরও কোনো ডাক্তার আসেন না এখানে। স্বাস্থ্যসম্মত কোনো টয়লেট নেই। এখনো ঝুলন্ত টয়লেট ব্যবহার করছেন এখানকার হাজার হাজার মানুষ। প্রতিনিয়ত হচ্ছে বাল্যবিবাহ।

সাইমদ্দিন প্রামানিক কালবেলাকে বলেন, এখানে বর্ষার পানি আসলে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ পদক্ষেপ নেয় না। এখানে কোনো কবরস্থান ছিল না। আমরা সবাই মিলে অল্প জায়গায় একটা কবরের করেছি। কবরস্থানের জায়গাটি নিচু জায়গায় হওয়ায় সেখানে পানিতে তলিয়ে যায়, তাই বর্ষার সময়ে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা পাড়ের রাখালগাছি এলাকায় কবরস্থানের চিত্র। ছবি : কালবেলা

ঝর্ণা বেগম কালবেলাকে বলেন, আমাদের নৌকা ছাড়া চলার গতি নেই। আমরা খুব অসহায়। সরকারের কাছে দাবি আমাদের প্রতি মাসে যদি ডাক্তার আসে তাহলে আমরা একটু উপকার পাই। আমাদের দিকে কারও নজর নেই। খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।

বাবু মাতুব্বর কালবেলাকে বলেন, আমাদের রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। আমরা চলাচল করতে পারি না। খুব সমস্যা হয় চলাচলে। কৃষিকাজ করি তাই আমাদের রাস্তাটা খুবই জরুরি। এগুলো মেরামত করার জন্য কেউ এখনো আসেনি।

তবে এসব বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিলেন, সংশ্লিষ্টরা! গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. কবির হোসেন কালবেলাকে জানান, এটা উপজেলার শেষ সীমানায়। তারপরও সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে স্কুল স্থাপনের ক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। ওই এলাকার মানুষজন দিনমজুরের পাশাপাশি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই অনেক বাচ্চাই পরিবারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। স্কুলে ঠিকমতো আসে না। শিশুদের স্কুলমুখী করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, এখানকার লোকজন যোগাযোগের জন্য আসলে চিকিৎসা সেবা থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমি মনে করি সেখানে যদি একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা যায় রাখালগাছি এলাকায় ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবে। এ বিষয়টি ইতিমধ্যেই উপর মহলে জানিয়েছি।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান কালবেলাকে জানান, কিছু কিছু জায়গা দুর্গম, ঝুঁকিপূর্ণ ও নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় নিয়মিত যে সেবাগুলো দেওয়া দরকার স্বাভাবিকভাবে তাতে কিছুটা বিঘ্ন হয়। আমরা ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর রাখালগাছি এলাকার কবরস্থানের বিষয়টা আমাদের নজরে আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রাক্তনের পাশে বসে বর্তমান প্রেমিকার নামে পূজা

৫ আগস্টের পর থেকে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ নেই : উপদেষ্টা আসিফ

কক্সবাজার ইস্যুতে ‘গরম’ ছিল এনসিপির সাধারণ সভা 

সিলেটে পাথর লুটের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘মৃত ভোটারদের’ সঙ্গে চা পান করলেন রাহুল গান্ধী

টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস, সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

সাঈদীকে নিয়ে জামায়াত আমিরের বিবৃতি

ট্রেন আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার প্রশ্ন

গাজীপুরে এক বছরে বন্ধ ১০৬ কারখানা, অপরাধে জড়াচ্ছেন বেকার শ্রমিকরা

১০

সুপার কাপে নাটকীয় জয়ের পরও হতাশ পিএসজি কোচ

১১

ভারত যেন মুখোমুখি না হয় পাকিস্তানের—সাবেক পাক ক্রিকেটারের প্রার্থনা

১২

প্রধান বিচারপতির বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত

১৩

রাশিয়া / উদ্যান রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয়রা

১৪

হলিউডে অভিনয় করবেন জাহিদ হাসান?

১৫

সেপটিক ট্যাংকের শাটার খুলতে গিয়ে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

১৬

দুদকের অভিযানের পরে নড়েচড়ে বসেছে সিলেটের প্রশাসন

১৭

‘অপুকে নির্যাতন করে উপদেষ্টার নাম বলানো হয়েছে’

১৮

হাসপাতালে হিরো আলম

১৯

‘আসছে পানি ভাসছে মানুষ’, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

২০
X