শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
আল-আমিন অনিক, মহিপুর (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বরইতলা নদীর ‘বাঁধ’ এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর

বরইতলা নদীর গাববাড়িয়া পয়েন্টে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীটি এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর। ছবি : কালবেলা
বরইতলা নদীর গাববাড়িয়া পয়েন্টে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীটি এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর। ছবি : কালবেলা

পটুয়াখালীর মহিপুর থানাধীন ডালবুগঞ্জ ও মহিপুর সদর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বরইতলা নদী। কাগজে-কলমে নদীটির নাম বরইতলা হলেও কেউ একে ‘সোনামুখী’, আবার কেউ ‘গাববাড়িয়া নদী’ নামেও চেনে। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীর গাববাড়িয়া পয়েন্টে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীটি এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বাঁধের কারণে নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে তিন দিকের শাখা নদী মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকা ১৯টি স্লুইসগেট অকেজো হয়ে গেছে। এখন জোয়ারের সময় পানি ওঠে কিন্তু ভাটায় নামে না। এতে ভেতরের খালগুলো স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ডালবুগঞ্জ, ধুলাসার, মিঠাগঞ্জ, মহিপুর ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্তত ৭৫ হাজার একর কৃষিজমি, চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অর্ধলাখের বেশি কৃষক।

কৃষকরা জানান, আগে খালবিলের পানি সেউচি (অযান্ত্রিক পদ্ধতি) ব্যবহার করে সহজেই জমিতে সেচ দেওয়া যেত। কিন্তু এখন যান্ত্রিক সেচের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতে কৃষি উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদিত ফসলের দাম। বর্ষার শুরুতেই হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় আমন জমি। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় কৃষকরা বীজতলা পর্যন্ত করতে পারেন না। গবাদিপশু পালনেও পড়েছেন বিপাকে।

অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের ফলে বরইতলা-সোনাতলা সংযোগ নদীর ৪টি শাখা নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভাটার সময় সাপুড়িয়া হয়ে পানি নামতে নামতে আবার জোয়ার এসে যায়। এছাড়া প্রায় সব স্লুইসগেটেই পলি জমে কার্যত মাটির নিচে দেবে গেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে কাঁটাভাড়ানি খাল ও বরইতলা নদী দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ছইলা-কেওড়া বাগানসহ সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনভূমিও ঝুঁকির মুখে।

একসময় এই নদীপথ দিয়ে নৌকা, লঞ্চ, ট্রলার চলাচল করত। ভাসানি ব্যবসায়ীরা নৌকায় মালামাল নিয়ে হাটে যেতেন। এখন নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। শাখা খালগুলোতে পলি জমে নদী ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জীবিকা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। এক কথায় বিস্তীর্ণ জনপদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মনসাতলী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, বরইতলা নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানির প্রবাহ কমে গেছে। এছাড়া বাবলাতলা স্লুইস খালে ওক্কাচোরা পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে ছোট পুকুর বানানো হয়েছে। আবার স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর মুখে জাল পেতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। এখন বীজ ধান ফেলতেও ভোগান্তি।

মিরপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, বরইতলা নদী আর নদী নেই, মরে গেছে। এক সময় এ নদী খরস্রোতা ছিল। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন নদী শুধু নামে। একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। এখন এপার থেকে ওপারে হেঁটে যাওয়া যায়।

বাঁধ নির্মাণের সময় ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুস সালাম সিকদারসহ হাজার হাজার কৃষক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন। স্থানীয়রা জানান, ওই স্থানে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের উদ্বোধন হলেও রহস্যজনকভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ব্রিজ নির্মাণে খরচ কম হতো এবং পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতো না। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনাহীনভাবে বাঁধ তৈরি করে নদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা–ধরা’র সমন্বয়ক ও নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মী মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, বাঁধ দিয়ে নদীর বুক ভরাট করা নদী হত্যার শামিল। এতে পানির প্রবাহ কমে নদী ও আশপাশের খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষিবিদরা জানান, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় জমির উর্বরতা কমেছে। ফলে ভালো ফসল ফলাতে কৃষকদের সার ও কীটনাশকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে কৃষক ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে টেকসই সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১০

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১১

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১২

প্যানেলে তন্বির জন্য পদ শূন্য রাখলেও একই পদে লড়ছেন বাগছাসের এক নেতা

১৩

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনা দল ঘোষণা

১৪

আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট

১৫

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ : এনামুল হক চৌধুরী

১৬

জিপিএ ৫ পেয়েও দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পায়নি ১৪১৮ জন

১৭

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বড় রদবদল

১৮

রাজশাহীর প্রবীণ সংবাদপত্র এজেন্ট হেকমত উল্লাহ মারা গেছেন

১৯

রোডম্যাপ কার্যকরের আগে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে : খেলাফত মজলিস

২০
X