দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের কিছমত খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি। কুমিল্লা-নোয়াাখালী দুই জেলার সীমানায় মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর-জনতা বাজারের এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়দের জন্য এটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ছয় গ্রামের প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মানুষ। প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ব্রিজে ওপর উঠলে অনেক যানবাহন থরথর করে কেঁপে ওঠে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। নতুন ব্রিজ নির্মাণ কিংবা দ্রুত মেরামতে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জনতা বাজার থেকে লক্ষণপুর সংযোগ সড়কের সরসপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ সরসপুর এলাকায় কিছমত খালের ওপর ১৯৯৪-৯৫ সালে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে ব্রিজের অধিকাংশ স্থানের রেলিং ভেঙে গেছে। এ ছাড়াও ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্রিজটি মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে যায়।
নড়বড়ে এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিনই শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ব্রিজটির মধ্যভাগের লোহার অ্যাঙ্গেল ও সিমেন্টের স্লাব ভেঙে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন স্থানীয়রা ব্রিজের মধ্যভাগের ভাঙা অংশে লোহার পাটাতন দিলেও পাশের স্লাব ভাঙা খালি অংশ দিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু এ ব্রিজটি দিয়ে ভারী কোনো মালামাল নিয়ে গাড়ি আনা-নেওয়া করা সম্ভব হয় নয়।
ব্রিজটি দিয়েই জনতা বাজার সোলাইমান উচ্চ বিদ্যালয়, সরসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জনতা বাজার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই ব্রিজটি মেরামতের দাবি জানান এলাকাবাসী। জনতা বাজার সোলাইমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, ব্রিজের মাঝখানের অংশ ভেঙে পড়ে আছে। মানুষের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। স্কুল-মাদরাসার ছোট ছোট শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। স্থানীয় কৃষক জামল হোসেন জানান, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এই সেতু দিয়ে বাজারে যেতে হয়। ব্রিজের দুরবস্থায় তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন, সাবিনা আক্তার ও তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে তাদের ভয় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, কুমিল্লা ৯ আসনের এটিএম আলমগীর সাহেব এমপি ১৯৯৫ সালে এ ব্রিজটি নির্মাণ করেন। ব্রিজ হওয়ার পর থেকে রিকশা, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন প্রতিনিয়তই সেতুটি দিয়ে চলাচল করত। প্রায় ১২ বছর আগেই ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে কোনো এমপি-মন্ত্রী, চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় মেম্বার এ ব্রিজটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়নি। এতে করে দিন দিন ব্রিজটি আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
সরসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা ভাঙা অংশটুকু সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ ছাড়া নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য দরপত্র পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ শুনে পরিদর্শন করেছি। ব্রিজটি পুনর্নির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়েই নির্মাণকাজ শুরু করব।
মন্তব্য করুন