বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে স্বৈরাচার আর রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতা হত্যার রক্তে রঞ্জিত স্বৈরাচারের হাত, আর ওই হাতে হাত মিলিয়েছে জামায়াত। অবশ্য এ সখ্যতা তাদের নতুন নয়, ১৯৮৬ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত হাত মিলিয়ে আরেক স্বৈরাচার এরশাদকে বৈধতা দিয়েছিল।’
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর জেলা পরিষদ সভাকক্ষে উত্তর জেলা মহিলা দল আয়োজিত সংগঠনের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, ‘যাদের হাতে জামায়াতের নেতাদের রক্ত, যারা গত ১৫ বছরে তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে; তাদের সঙ্গে ক্ষমতার লোভে হাত মিলিয়েছে জামায়াত। ছাত্রশিবির কোনোভাবেই ডাকসুতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে জয় লাভ করতে পারেনি। প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের ভোটও কাস্ট হয়েছে। এ ছাত্রলীগের ভোট গেল কার পকেটে? এটা অনুসন্ধান করলেই শিবিরের বিজয় কীভাবে হয়েছে, তা সহজেই অনুমান করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। পত্রিকায় দেখলাম, দিল্লিতে বসে তার আমলে সুবিধা নেওয়া শিল্প মালিকদের কাছ থেকে শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছেন। দেশের গণতন্ত্র এবং আগামী নির্বাচনকে নস্যাৎ করতে। সেই টাকার উত্তাপ আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। গতকাল ডাকসু নির্বাচনেও সেই টাকার উত্তাপ কি না, সেটা প্রশ্ন থেকে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ডাকসু বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির সুতিকাগার। এই বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিন্তা হয়, এ ঢাবিতে কীভাবে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির বিরোধীরা বিজয়ী হয়? এ নির্বাচনে স্বৈরাচার আর রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। এটা বিজয় নয়, ছাত্র-জনতার বিজয় কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ডাকসুর নির্বাচন, ফলাফলে এটাই প্রমাণ হয়েছে। আমরা ষড়যন্ত্র আমরা অনুমান করছিলাম কিন্তু ব্যর্থ করে দিতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা- অস্বীকার করব না।’
সভায় বিএনপির নেত্রীকে আপসহীন উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসংখ্য নির্যাতন সহ্য করেও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত করেননি। শেখ হাসিনা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এক কাপড়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, শেখ হাসিনা শুধু তার বাড়ি থেকেই বিতাড়িত হননি, দেশ থেকেও হয়েছেন। আজ দিল্লিতে তিনি পলাতক জীবনযাপন করছেন।’
আলোচনা সভায় উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজিল চৌধুরী লিলির সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা নিলুর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন।
বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ আজিজুল হক, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কামাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেল, মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক হযরত আহমেদ শাকিল প্রমুখ।
এদিকে মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে উত্তর জেলা মহিলা দল।
এ সময় র্যালিটি নগরীর কাচারি সড়ক হয়ে জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এতে উত্তর জেলার অধীনস্থ হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলার মহিলা দলের বিপুল নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। এ সময় একজন শিশু সমর্থক নিজেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজে সজ্জিত করে র্যালিতে অংশ নিয়ে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানায়। পরে কেক কেটে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।
মন্তব্য করুন