কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল চরম জনবল-সংকটে ভুগছে। দীর্ঘদিনের এ সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যার ফলে প্রায় সাড়ে চার হাজার খামারি ও কয়েক লাখ কৃষক নানা ধরনের বিপাকে পড়েছেন। মাসখানেক আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বদলির পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ে ১১টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র একজন ড্রেসার ও একজন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য)। বাকি ৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। তার মধ্যেও বর্তমানে উপসহকারী কর্মকর্তা অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থাকায় কার্যত পুরো অফিস অচল হয়ে পড়েছে।
মাসখানেক আগে দৌলতপুরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হলে তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে। তবে একযোগে দুটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করায় তিনি দৌলতপুরে নিয়মিত উপস্থিত হতে পারছেন না। ফলে খামারিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাসের এই বৃহৎ উপজেলায় রয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি গবাদি পশু ও এক কোটির কাছাকাছি হাঁস-মুরগি। এখানকার মানুষের জীবিকা মূলত কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পশুরা সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক খামারি গ্রাম্য পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন, যা প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকার খামারি নাইম ইসলাম জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল নেই বললেই চলে। এখন তো স্থায়ী ডাক্তারই নেই। ডাকলেও আসেন না, আর এলে টাকা চাওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছি।
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় পশুপালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে আমার দুটি গরু অসুস্থ। হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছেই যেতে হচ্ছে। এতে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে গরুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
তবে দৌলতপুর উপজেলায় বর্তমানে প্রকল্পভিত্তিক আরও পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চারজন কর্মরত আছেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প-এ এবং একজন ‘উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রকল্প-এ। তবে তাদের নিয়োগ মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের শেষ দিকে ও ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও দৌলতপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, দৌলতপুরে মাত্র দুজন স্থায়ী জনবল রয়েছে। প্রকল্পভিত্তিক আরও পাঁচজন কাজ করছেন। তবে স্থায়ী জনবল না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন, জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই জনবল সংকট রয়েছে, তবে দৌলতপুরের পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। সেখানে বর্তমানে কোনো স্থায়ী ডাক্তার বা সার্জন নেই। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশাকরি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন